শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

নবম শ্রেণি: বিজ্ঞান বই: অষ্টম অধ্যায়: জিনতত্ত্ব ও বশগতিবিদ্যা অধ্যায়ের নোট

 অধ্যায়ের মূলকথা

জীববিজ্ঞানের যে শাখায় জিনের গঠন, কাজ, বংশপরম্পরায় সঞ্চারণের ধরন ও ফলাফল সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করা হয় তাকে বংশগতিবিদ্যা বা জিনতত্ত্ব বলে। গ্রেগর জোহান মেন্ডেলকে জিনতত্ত্বের জনক বলা হয়। ১৮৫৭ সালে তিনি বংশগতির রহস্য উদঘাটনের কাজ গবেষণা শুরু করেন। ১৮৬৫ সালে উক্ত গবেষণার ফলাফল দুটি সূত্রের মাধ্যমে উপস্থাপন করেন যা মেন্ডেলের সূত্র বা মেন্ডেলের বংশগতির সূত্র নামে পরিচিত। সামাজিকভাবে মেন্ডেলের সূত্রসমূহের তথা মেন্ডেলিজম এর গবেষণা ও ফলাফলকে মেন্ডেলিয়ান ইনহেরিটেন্স বলে। কোনো জীবের নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী অ্যালিল বা জিন দুটি একইধর্মী হলে তাকে হোমোজাইগাস (যেমন- লম্বা TT বা খাটো tt) এবং বিপরীতধর্মী বা অসমপ্রকৃতির হলে (যেমন- Tt) তাকে হেটারোজাইগাস বলে। মেন্ডেলের উপাদান বা জিনের অবস্থান ক্রোমোজোমে তাই বংশানুক্রমিক গতিপ্রকৃতির বিষয়ে ক্রোমোজোম আর উপাদানের মধ্যে এত সাদৃশ্য। তাছাড়া বংশগতি নির্ধারণের সময় জিন ও ক্রোমোজোম অভিন্ন আচরণ প্রদর্শন করে।

 

পাঠ সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাবলি

১। জিন (Gene): জিন হলো জীবের সকল দৃশ্য ও অদৃশ্যমান লক্ষণ বা বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী একক।

২। জিনতত্ত্ব (Genetics): বিজ্ঞানের যে শাখায় জিনের গঠন, নিয়ন্ত্রণ, প্রকাশ, কার্যপদ্ধতি ও তার বংশানুক্রমিক সঞ্চালন পদ্ধতি ও ফলাফল নিয়ে আলোচনা করা হয় তাকে জিনতত্ত্ব বলে।

৩। বংশগতি (Heredity) : যে প্রক্রিয়ায় পিতা-মাতার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সন্তান-সন্ততির দেহে বংশপরম্পরায় সঞ্চারিত হয় তাকে বংশগতি বলে।

৪। সংকরায়ণ (Hybridization): দুটি ভিন্ন প্রজাতির মধ্যে আন্তঃপ্রজননের ফলে উদ্ভূত নতুন প্রজন্মকে ওই দুই প্রজাতির সংকর বলে। সংকর করার প্রক্রিয়াটিকে সংকরায়ণ বলে। সংকর জীব তাদের নিজস্ব গুণাবলির অধিকারী হতে পারে।

৫। একবর্ষজীবী উদ্ভিদ (Annual Plant): যেসব উদ্ভিদ এক বছরের মধ্যে অঙ্কুরোদগম, বৃদ্ধি এবং ফল ধারণ করার পর মারা যায় তাদেরকে একবর্ষজীবী উদ্ভিদ বলে। প্রায় সকল খাদ্য শস্যই একবর্ষজীবী।

৬। পরনিষেক (Cross fertilization): পরনিষেক হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে দুটি ভিন্ন ব্যক্তির ডিম্বাণু এবং শুক্রাণু নিষেকের জন্য একত্রিত হয়। এটি প্রায় সব প্রাণীতে ঘটে।

৭। মনোহাইব্রিড ক্রস (Monohybrid cross): একজোড়া বিপরীত বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন চরিত্রের ভিত্তিতে দুটি জীবের মধ্যে জনন সম্পাদিত হলে তাকে মনোহাইব্রিড ক্রস বলে। মনোহাইব্রিড ক্রস একটি জিনের উত্তরাধিকারের জন্য দায়ী।

৮। ডাইহাইব্রিড ক্রস (Dihybrid cross): জিনতত্ত্বের কোনো পরীক্ষায় যখন দুইজোড়া বিপরীত বৈশিষ্ট্য বিবেচনায় রেখে ক্রস বা সংকরায়ণ ঘটানো হয় তখন তাকে দ্বিসংকর বা ডাইহাইব্রিড ক্রস বলে। যেমন- হলুদ বর্ণ ও গোলাকৃতির বীজবিশিষ্ট মটরশুঁটি উদ্ভিদের সাথে সবুজ বর্ণ ও কুঞ্চিত বীজবিশিষ্ট মটরশুঁটি উদ্ভিদের ক্রস।

৯। অ্যালিল (Allele): অ্যালিল হলো একই জিনের দুটি ভিন্ন রূপ। কোনো একজোড়া হোমোলোগাস ক্রোমোজোমের কোনো একটা নির্দিষ্ট লোকাসে অবস্থিত জিনযুগলকে পরস্পরের অ্যালিল বলে।

১০। হোমোজাইগাস (Homozygous): কোনো জীবে একটি নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী অ্যালিল দুটি সমপ্রকৃতির হলে, তাকে হোমোজাইগাস বলে। যেমন- BB কালো পশম, bb = বাদামি পশম ইত্যাদি।

১১। হেটারোজাইগাস (Heterozygous): কোনো জীবে একটি নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী অ্যালিল দুটি অসমপ্রকৃতির হলে তাকে হেটারোজাইগাস বলে।

১২। প্রকট বৈশিষ্ট্য (Dominant character): এক জোড়া বিপরীত বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন দুটো জীবের মধ্যে সংকরায়ণ করলে প্রথম অপত্য বংশে যে বৈশিষ্ট্যটি বাহ্যিকভাবে প্রকাশিত হয়, তাকে প্রকট বৈশিষ্ট্য বলে। যেমন- হোমোজাইগাস লম্বা ও খাটো মটরশুঁটি গাছের মধ্যে সংকরায়ণ করলে অপত্য বংশে (F) সব গাছ লম্বা হয়। এখানে লম্বা বৈশিষ্ট্যটি খাটো বৈশিষ্ট্যের ওপর প্রকট।

১৩। প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য (Recessive character): এক জোড়া বিপরীত বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন দুটো জীবের মধ্যে সংকরায়ণ করলে প্রথম অপত্য বংশে (F) যে বৈশিষ্ট্যটি অপ্রকাশিত অবস্থায় বিদ্যমান থাকে তাকে প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য বলে। যেমন- হোমোজাইগাস লম্বা ও খাটো মটরশুঁটি গাছের মধ্যে সংকরায়ণ করলে প্রথম অপত্য বংশে (F) শুধুমাত্র লম্বা বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায়; কিন্তু খাটো বৈশিষ্ট্যটি অপ্রকাশিত থাকে। এখানে খাটো বৈশিষ্ট্যটি লম্বা বৈশিষ্ট্যের নিকট প্রচ্ছন্ন।

১৪। ফিনোটাইপ (Phenotype): জীবের প্রত্যেকটি বৈশিষ্ট্য জিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। কোনো জীবের বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য বা লক্ষণই হলো তার ফিনোটাইপ। যেমন- মটরশুঁটি গাছ লম্বা বা খাটো হতে পারে যা বাহ্যিকভাবে বোঝা যায়; এ লম্বা বা খাটো বৈশিষ্ট্যই হলো তার ফিনোটাইপ।

১৫। জিনোটাইপ (Geneotype): কোনো নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী জিন সমষ্টিকে ওই জীবের ওই বৈশিষ্ট্যের জিনোটাইপ বলে। মেন্ডেলের মতে, জীবের প্রত্যেকটি বৈশিষ্ট্য এক জোড়া জিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। অবশ্য আধুনিককালে প্রমাণিত হয়েছে যে, একটি বৈশিষ্ট্য একাধিক জোড়া জিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতে পারে। যেমন- মটরশুঁটি গাছের খাটো বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী জিন হলো t। সুতরাং বিশুদ্ধ মটরশুঁটি গাছের খাটো বৈশিষ্ট্যের জিনোটাইপ হলো tt।

১৬। জনিতৃ জনু বা P জনু (Parental generation or P generation): একসংকর বা দ্বিসংকর জনন পরীক্ষার শুরুতে যে দুটি জীবের মধ্যে প্রজনন ঘটানো হয়, তাদের জনিতৃ জনু বা P জনু বলে।

১৭। ক্রস (Cross): বিপরীত লিঙ্গধারী দুটি জীবের মিলনকে ক্রস বলে।

১৮। ব্যাক ক্রস (Back cross): অপত্য বংশের (F1, জনু) জীবের সাথে পিতা-মাতার যেকোনো বৈশিষ্ট্যের ক্রসকে ব্যাক ক্রস বলা হয়। যেমন- Tt × TT অথবা Tt x tt.

১৯। টেস্ট ক্রস (Test cross): অপত্য বংশের জীবের সাথে (F1 বা F2 বা F3, ইত্যাদি) তার প্রচ্ছন্ন পিতা-মাতার ক্রসকে টেস্ট ক্রস বলে। যেমন- Tt x tt. কোনো জীব হোমোজাইগাস না হেটারোজাইগাস তা জানার জন্য এ পরীক্ষা করা হয়। যেমন- সংকর লম্বা মটরগাছ (Tt) এবং বিশুদ্ধ খাটো মটরগাছ (tt) এর সংকরায়ণ ঘটালে এদের ফিনোটাইপিক ও জিনোটাইপিক অনুপাত হবে ১:১।

 

স্পেশাল কুইজ 

প্রশ্ন ১। হরিপদ কাপালীর আবিষ্কৃত ধানের নাম কী?

উত্তর: হরিধান।

প্রশ্ন ২। ধানক্ষেতে অজানা প্রজাতির ধান থেকে নতুন জাতের ধান আবিষ্কার করেন কে?

উত্তর: হরিপদ কাপালী।

প্রশ্ন ৩। জীবের অন্যতম বৈশিষ্ট্য কী?

উত্তর: প্রজনন।

প্রশ্ন ৪। প্রজনন কী ধরনের কার্যক্রম?

উত্তর: শারীরতত্ত্বীয়।

প্রশ্ন ৫। মাতা-পিতার বৈশিষ্ট্য পরবর্তী প্রজন্মে সঞ্চালিত হয় কীভাবে?

উত্তর: প্রজননের মাধ্যমে।

প্রশ্ন ৬। প্রজননের মাধ্যমে জীব কী ধরে রাখে?

উত্তর: অস্তিত্ব।

প্রশ্ন ৭। এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে বৈশিষ্ট্য স্থানান্তরের প্রক্রিয়াকে কী বলে?

উত্তর: বংশগতি।

প্রশ্ন ৮। বংশগতির মৌলিক একক কী?

উত্তর: জিন।

প্রশ্ন ৯। DNA কোষের কোথায় পাওয়া যায়?

উত্তর: ক্রোমোজোমে।

প্রশ্ন ১০। জীবের জিনগুলো কোথায় সজ্জিত থাকে?

উত্তর: DNA-তে।

প্রশ্ন ১১। প্রজাতির বৈশিষ্ট্য কী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়?

উত্তর: জিন দ্বারা।

প্রশ্ন ১২। জিন দ্বারা প্রজাতির কী প্রকাশ পায়?

উত্তর: বৈশিষ্ট্য।

প্রশ্ন ১৩। জিনের গঠন, নিয়ন্ত্রণ, প্রকাশ, ফলাফল কোন শাখায় আলোচনা করা হয়?

উত্তর: জিনতত্ত্বে।

প্রশ্ন ১৪। বংশগতিবিদ্যার জনক কে?

উত্তর: গ্রেগর জোহান মেন্ডেল।

প্রশ্ন ১৫। গ্রেগর জোহান মেন্ডেল এর জন্ম ও মৃত্যু সাল কত?

উত্তর: ১৮২২-১৮৮৪।

প্রশ্ন ১৬। জীবের বংশানুক্রমের ধারণা প্রথম কে প্রদান করেন?

উত্তর: গ্রেগর জোহান মেন্ডেল।

প্রশ্ন ১৭। গ্রেগর জোহান মেন্ডেল কোন স্থানের বাসিন্দা?

উত্তর: চেক প্রজাতন্ত্র।

প্রশ্ন ১৮। গ্রেগর জোহান মেন্ডেল মূলত কী ছিলেন?

উত্তর: একজন ধর্মযাজক।

প্রশ্ন ১৯। বংশগতিবিদ্যায় কোন গাছ নিয়ে পরীক্ষা করা হয়?

উত্তর: মটরশুঁটি।

প্রশ্ন ২০। গ্রেগর জোহান মেন্ডেল কত বছর মটরশুঁটি গাছ নিয়ে পরীক্ষা চালান?

উত্তর: ৭ বছর।

প্রশ্ন ২১। মেন্ডেলের মৃত্যুর কত বছর পর তার গবেষণার ফলাফল পুনরাবিষ্কার হয়?

উত্তর: ১৬ বছর।

প্রশ্ন ২২। মেন্ডেলের গবেষণার ফলাফল পুনরাবিষ্কার করেন কয়জন বিজ্ঞানী?

উত্তর: তিনজন।

প্রশ্ন ২৩। মেন্ডেল কত সালে তার গবেষণা শুরু করে?

উত্তর: ১৮৫৬ সালে।

প্রশ্ন ২৪। মটরশুঁটি কি ধরনের উদ্ভিদ?

উত্তর: উভলিঙ্গ।

প্রশ্ন ২৫। পরাগায়ন কত প্রকার?

উত্তর: দুই প্রকার।

প্রশ্ন ২৬। প্রজনন কত ধরনের?

উত্তর: দুই ধরনের।

প্রশ্ন ২৭। মটরশুঁটি কি ধরনের প্রজনন সম্পন্ন করে?

উত্তর: যৌন প্রজনন।

প্রশ্ন ২৮। মেন্ডেল কত ধরনের মটরশুঁটি উদ্ভিদের বীজ দিয়ে পরীক্ষা করেন?

উত্তর: ৩৪ ধরনের।

প্রশ্ন ২৯। মেন্ডেল মটরশুঁটি উদ্ভিদের কতটি বৈশিষ্ট্য নিয়ে

পরীক্ষা করেন?

উত্তর: ৭টি।

প্রশ্ন ৩০। মেন্ডেল মটরশুঁটি উদ্ভিদের ৭টি বৈশিষ্ট্যের জন্য কতটি উদ্ভিদ নির্বাচন করেন?

উত্তর: ১৪টি।

প্রশ্ন ৩১। কোন বৈশিষ্ট্যের গাছ দিয়ে মেন্ডেল প্রথম পরীক্ষা চালান?

উত্তর: লম্বা এবং খাটো।

প্রশ্ন ৩২। Mono শব্দের অর্থ কী?

উত্তর: একটি।

প্রশ্ন ৩৩। মনোহাইব্রিড ক্রসে F2 প্রজন্মের ফলাফল কী?

উত্তর: ৩:১।

প্রশ্ন ৩৪। Di শব্দের অর্থ কী?

উত্তর: দুই।

প্রশ্ন ৩৫। ডাইহাইব্রিড ক্রসে । প্রজন্মের ফলাফল কী?

উত্তর: ৯:৩:৩:১।

প্রশ্ন ৩৬। সংকরায়ণ এর ক্ষেত্রে কোন বৈশিষ্ট্য দুটি গুরুত্বপূর্ণ?

উত্তর: প্রকট ও প্রচ্ছন্ন।

প্রশ্ন ৩৭। জিনের প্রতিরূপকে কী বলে?

উত্তর: অ্যালিল।

প্রশ্ন ৩৮। প্রতিটি জিনে কতটি অ্যালিল বিদ্যমান?

উত্তর: দুটি।

প্রশ্ন ৩৯। ডিপ্লয়েড জীবে দুটি অ্যালিল কেমন হয়?

উত্তর: একই বা ভিন্ন।

প্রশ্ন ৪০। দুটি অ্যালিল একই হলে তাকে কী বলে?

উত্তর: হোমোজাইগাস।

প্রশ্ন ৪১। দুটি অ্যালিল ভিন্ন হলে তাকে কী বলে?

উত্তর: হেটারোজাইগাস।

প্রশ্ন ৪২। কোনো নির্দিষ্ট জীবের অ্যালিলগুলোকে কী বলা হয়?

উত্তর: তার জিনোটাইপ'।

প্রশ্ন ৪৩। কোনো নির্দিষ্ট জীবের বাহ্যিক বৈশিষ্ট্যগুলোকে কী বলে?

উত্তর: ফিনোটাইপ।

প্রশ্ন ৪৪। হেটারোজাইগাস জীবের যে অ্যালাইলটির বৈশিষ্ট্য প্রকাশিত হয় তাকে কী বলে?

উত্তর: প্রকট জিন।

প্রশ্ন ৪৫। হেটারোজাইগাস জীবের যে অ্যালাইলটির বৈশিষ্ট্য অপ্রকাশিত থাকে তাকে কী বলে?

উত্তর: প্রচ্ছন্ন জিন।

প্রশ্ন ৪৬। মেন্ডেলের সূত্র কে প্রকাশ করেন?

উত্তর: কার্ল করেন্স।

প্রশ্ন ৪৭। মেন্ডেলের সময় জিনকে কী হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছিল?

উত্তর: ফ্যাক্টর।

প্রশ্ন ৪৮। মেন্ডেলের প্রথম সূত্রের অপর নাম কী?

উত্তর: পৃথকীকরণ সূত্র।

প্রশ্ন ৪৯। জিন দীর্ঘকাল একসঙ্গে থাকলেও কী অক্ষুণ্ণ থাকে?

উত্তর: স্বকীয়তা।

প্রশ্ন ৫০। মেন্ডেলের দ্বিতীয় সূত্র কী নামে পরিচিত?

উত্তর: স্বাধীনভাবে মিলনের সূত্র।

প্রশ্ন ৫১। বংশগতির অপর নাম কী?

উত্তর: হেরিডিটি।

প্রশ্ন ৫২। Genetics শব্দটি প্রথম কে ব্যবহার করেন?

উত্তর: উইলিয়াম বেটসন।

প্রশ্ন ৫৩। Genetics শব্দটি প্রথম কত সালে ব্যবহৃত হয়?

উত্তর: ১৯০৬ সালে।

প্রশ্ন ৫৪। Genetics শব্দটি কোন শব্দ থেকে উদ্ভূত?

উত্তর: গ্রিক শব্দ Genno.

প্রশ্ন ৫৫। Genno এর ইংরেজি অর্থ কী?

উত্তর: to give birth.

প্রশ্ন ৫৬। মেন্ডেল তত্ত্বের পুনরাবিষ্কার হয় কত সালে?

উত্তর: ১৯০০ সালে।

প্রশ্ন ৫৭। মানুষের দেহে কতটি ক্রোমোজোম আছে?

উত্তর: ৪৬টি/২৩ জোড়া।

প্রশ্ন ৫৮। ক্রোমোজোম ও মেন্ডেলের উপাদানের মধ্যে মিলের কথা উল্লেখ করেন কে?

উত্তর: বিজ্ঞানী সাটন ও বোভেরি।

প্রশ্ন ৫৯। মেন্ডেলের উপাদান ও জিনের অবস্থান কোথায়?

উত্তর: ক্রোমোজোমে।

প্রশ্ন ৬০। জিন ও ক্রোমোজোম কী ধরনের আচরণ করে?

উত্তর: একই ধরনের।

প্রশ্ন ৬১। মানুষের শরীরে অটোজোম কত জোড়া?

উত্তর: ২২ জোড়া।

 

জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্ন ১। জিন কী?

উত্তর: জিন হলো জীবের সকল দৃশ্য ও অদৃশ্যমান লক্ষণ বা বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী একক।

প্রশ্ন ২। ক্রোমোজোমের প্রধান উপাদান কী?

উত্তর: ক্রোমোজোমের প্রধান উপাদান হলো DNA। এখানে জীবের জিনগুলো সজ্জিত থাকে।

প্রশ্ন ৩। DNA এর পূর্ণরূপ কী?

উত্তর: DNA এর পূর্ণরূপ হলো ডিঅক্সিরাইবো নিউক্লিক এসিড (Deoxyribo Nucleic Acid)

প্রশ্ন ৪। DNA এর গঠন কেমন?

উত্তর: DNA এর গঠন সাধারণত দুই সূত্রবিশিষ্ট

পলিনিউক্লিওটাইডের সর্পিলাকার।

প্রশ্ন ৫। Heredity কী?

উত্তর: জীবের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী জিনসমূহ প্রজননের মাধ্যমে পিতামাতা থেকে বংশানুক্রমে সন্তানসন্ততির দেহে সঞ্চারিত হওয়ার প্রক্রিয়াই হলো Heredity.

প্রশ্ন ৬। জিনতত্ত্ব কাকে বলে?

উত্তর: বিজ্ঞানের যে শাখায় জিনের গঠন, নিয়ন্ত্রণ, প্রকাশ, কার্যপদ্ধতি ও তার বংশানুক্রমিক সঞ্চালন পদ্ধতি ও ফলাফল নিয়ে আলোচনা করা হয় তাকে জিনতত্ত্ব বলে।

প্রশ্ন ৭। জিনের কাজ কী?

উত্তর: জিনের কাজ হলো সাধারণত প্রজাতির বৈশিষ্ট্য প্রকাশিত এবং নিয়ন্ত্রণ করা।

প্রশ্ন ৮। হরিধান কীভাবে আবিষ্কৃত হয়?

উত্তর: হরিপদ কাপালী তার ধানক্ষেতে অজানা প্রজাতির ধান দেখতে পেয়ে সেখান থেকে বীজ তৈরি করেন যা পরবর্তীকালে উচ্চফলনশীল হরিধান হিসেবে স্বীকৃতি পায়।

প্রশ্ন ৯। গ্রেগর জোহান মেন্ডেল কবে কোথায় জন্মগ্রহণ করেন?

উত্তর: গ্রেগর জোহান মেন্ডেল ১৮২২ সালে অস্ট্রিয়ার ব্রুনো বর্তমান চেক প্রজাতন্ত্রে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একজন ধর্মযাজক ছিলেন।

প্রশ্ন ১০। মেন্ডেলের গবেষণার ফলাফল কে পুনরাবিষ্কার করেন?

উত্তর: মেন্ডেলের মুত্যুর ১৬ বছর পর হিউগো দ্য ভ্রিস, কার্ল করেন্স এবং এরিক স্কেরমেক নামে তিনজন বিজ্ঞানী পৃথকভাবে কিন্তু একই সময়ে মেন্ডেলের গবেষণার ফলাফল পুনরাবিষ্কার করেন।

প্রশ্ন ১১। সংকরায়ণ বলতে কী বুঝ?

উত্তর: দুটি ভিন্ন প্রজাতির মধ্যে আন্তঃপ্রজননের ফলে উদ্ভূত নতুন প্রজন্মকে ওই দুই প্রজাতির সংকর বলে। সংকর করার প্রক্রিয়াটিকে সংকরায়ণ বা Hybridization বলে।

প্রশ্ন ১২। মটরশুঁটি কীভাবে প্রজনন ঘটায়?

উত্তর: মটরশুঁটি উভলিঙ্গী উদ্ভিদ। এটি স্বপরাগায়নের মাধ্যমে যৌন প্রজনন সম্পন্ন করে।

প্রশ্ন ১৩। Corolla কী?

উত্তর: কোনো ফুলের সবগুলো পাপড়ি মিলে যে দল গঠন করে সেটিই হলে দলমণ্ডল বা Corolla.

প্রশ্ন ১৪। Cross fertilization কাকে বলে?

উত্তর: দুটি ভিন্ন প্রজাতির মধ্যে প্রজনন ঘটলে তাকে Cross fertilization বলে।

প্রশ্ন ১৫। নিষেক কাকে বলে?

উত্তর: যৌন প্রজননে ডিম্বাণু ও শুক্রাণুর মিলনকে নিষেক বলে।

প্রশ্ন ১৬। মেন্ডেলিজম কী?

উত্তর: গ্রেগর জোহান মেন্ডেল দীর্ঘ সাত বছর মটরশুঁটি গাছের উপর গবেষণা করে বংশগতি সংক্রান্ত দুটি সূত্র আবিষ্কার করেন। বংশগতিসংক্রান্ত মেন্ডেলের সূত্র দুটিই মেন্ডেলিজম।

প্রশ্ন ১৭। জৈব বিবর্তন কী?

উত্তর: পূর্ব থেকে বিদ্যমান এমন সরল জীব পরিবেশের সাথে অনুকূলতা রক্ষাকল্পে ধীরগতিতে সার্বক্ষণিকভাবে দৈহিক পরিবর্তন আনয়নের মাধ্যমে নতুন জীবে রূপান্তরিত হওয়াকে

জৈব বিবর্তন বা অভিব্যক্তি (organic solution) বলে।

প্রশ্ন ১৮। মেন্ডেল উদ্ভিদের কোন কোন বৈশিষ্ট্য নিয়ে পরীক্ষা করেন?

উত্তর: মেন্ডেল উদ্ভিদের কাণ্ডের দৈর্ঘ্য, ফুলের অবস্থান, ফুলের রং, ফলের বর্ণ, ফলের আকৃতি, বীজের বর্ণ এবং বীজের আকৃতি এই সাতটি বৈশিষ্ট্য নিয়ে পরীক্ষা করেন।

প্রশ্ন ১৯। মনোহাইব্রিড ক্রস বলতে কী বুঝ?

উত্তর: যখন উদ্ভিদের একটি বৈশিষ্ট্য নিয়ে সংকর ঘটিয়ে পরীক্ষা চালানো হয় তখন তাকে মনোহাইব্রিড ক্রস বলা হয়।

প্রশ্ন ২০। ডাইহাইব্রিড ক্রস বলতে কী বুঝ?

উত্তর: যখন উদ্ভিদের দুটি বৈশিষ্ট্য নিয়ে সংকর ঘটিয়ে পরীক্ষা চালানো হয় তখন তাকে ডাইহাইব্রিড ক্রস বলা হয়।

প্রশ্ন ২১। উভলিঙ্গ ফুল কী?

উত্তর: যে ফুলের মধ্যে পুংস্তবক এবং স্ত্রীস্তবক উভয়ই বিদ্যমান তাকে উভলিঙ্গ ফুল বলা হয়।

প্রশ্ন ২২। মেন্ডেলের প্রথম সূত্রটি কী?

উত্তর: সংকর জীবে বিপরীত লক্ষণের ফ্যাক্টরগুলো মিশ্রিত বা পরিবর্তিত না হয়ে পাশাপাশি অবস্থান করে এবং জননকোষ সৃষ্টির সময় পরস্পর থেকে পৃথক হয়ে যায়। এটি পৃথকীকরণ সূত্র নামেও পরিচিত।

প্রশ্ন ২৩। মেন্ডেলের দ্বিতীয় সূত্রটি কী?

উত্তর: দুই বা ততোধিক জোড়া বিপরীত লক্ষণবিশিষ্ট গাছের মধ্যে সংকরায়ণ ঘটালে প্রথম প্রজন্মে কেবল প্রকট লক্ষণগুলোই প্রকাশিত হবে, কিন্তু জননকোষ সৃষ্টির সময় লক্ষণগুলো জোড়া ভেঙে পরস্পর থেকে স্বতন্ত্র বা স্বাধীনভাবে বিন্যস্ত হয়ে ভিন্ন ভিন্ন জননকোষে প্রবেশ করবে।

প্রশ্ন ২৪। জিনোটাইপ কাকে বলে?

উত্তর: কোনো নির্দিষ্ট জীবের অ্যালিলগুলোকে তার জিনোটাইপ বলে।

প্রশ্ন ২৫। ফিনোটাইপ কাকে বলে?

উত্তর: কোনো নির্দিষ্ট জীবের দৃশ্যমান বাহ্যিক বৈশিষ্ট্যগুলোকে তার ফিনোটাইপ বলে।

প্রশ্ন ২৬। হোমোজাইগাস বলতে কী বুঝ?

উত্তর: কোনো ডিপ্লয়েড জীবের দুটি অ্যালিল যদি একইরকম হয় তখন তাকে হোমোজাইগাস বলে।

প্রশ্ন ২৭। হেটারোজাইগাস বলতে কী বুঝ?

উত্তর: কোনো ডিপ্লয়েড জীবের দুটি অ্যালিল যদি ভিন্ন ভিন্ন হয় তখন তাকে হেটোরোজাইগাস বলে।

প্রশ্ন ২৮। ফ্যাক্টর কী?

উত্তর: ফ্যাক্টর বা জিন হলো জীবের সকল দৃশ্য ও অদৃশ্যমান লক্ষণ বা বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী একক।

প্রশ্ন ২৯। প্রচ্ছন্ন জিন কাকে বলে?

উত্তর: যে জিনের বৈশিষ্ট্য প্রথম বংশধরে প্রকাশ পায় না, তবে দ্বিতীয় বংশধরে এক-চতুর্থাংশ জীবে প্রকাশ পায় তাকে প্রচ্ছন্ন জিন বলে।

প্রশ্ন ৩০। প্রকট জিন কী?

উত্তর: জিনের দুটি ভিন্ন সংস্করণ এক সাথে থাকলে যে জিনের বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায় তাই প্রকট জিন।

প্রশ্ন ৩১। ডিপ্লয়েড কী?

উত্তর: দুটি হ্যাপ্লয়েড কোষের মিলনের ফলে সৃষ্ট অবস্থাই ডিপ্লয়েড।

প্রশ্ন ৩২। প্রকট বৈশিষ্ট্য কী?

উত্তর: মাতাপিতা থেকে প্রথম বংশধরে জীবের যে বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায় তাকে প্রকট বৈশিষ্ট্য বলে।

প্রশ্ন ৩৩। অ্যালিল কাকে বলে?

উত্তর: একই ক্রোমোজোম জোড়ের নির্দিষ্ট লোকাসে অবস্থানকারী নির্দিষ্ট জিন জোড়ার একটিকে অপরটির অ্যালিল বলে।

প্রশ্ন ৩৪। প্রকরণ কাকে বলে?

উত্তর: বংশগতভাবে প্রাপ্ত জিনের ভিন্নতার কারণে জীবগোষ্ঠীর বিভিন্ন সদস্যদের মধ্যে বংশগত পার্থক্যের সৃষ্টি হয়। এই পার্থক্যকেই প্রকরণ বলে।

প্রশ্ন ৩৫। লোকাস কী?

উত্তর: ক্রোমোজোমের যে স্থানে জিন অবস্থান করে তাই হলো লোকাস।

প্রশ্ন ৩৬। Genetics শব্দটি প্রথম কে ব্যবহার করেন?

উত্তর: বিজ্ঞানী উইলিয়াম বেটসন ১৯০৬ সালে প্রথম Genetics শব্দটি ব্যবহার করেন যা গ্রিক শব্দ Genno থেকে উদ্ভূত।

প্রশ্ন ৩৭। বংশগতি কাকে বলে?

উত্তর : জীবের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী জিনসমূহ প্রজননের মাধ্যমে পিতামাতা থেকে বংশানুক্রমে সন্তানসন্ততির দেহে সঞ্চারিত হওয়ার প্রক্রিয়াই হলো বংশগতি।

প্রশ্ন ৩৮। অটোজোম কী?

উত্তর : মানবদেহে ২২ জোড়া ক্রোমোজোম যারা শরীরবৃত্তীয়, ভ্রূণ ও দেহ গঠনে অংশ নেয় কিন্তু লিঙ্গ নির্ধারণে কোনো ভূমিকা নেই তারাই অটোজোম।

প্রশ্ন ৩৯। বংশগতির প্রধান উপাদান কী?

উত্তর: বংশগতির প্রধান উপাদান হলো জিন।

প্রশ্ন ৪০। ক্রোমোজোম ও মেন্ডেলের উপাদানের মধ্যে মিলের কথাটি সুস্পষ্ট করেন কে?

উত্তর: ১৯০২ সালে সাটন ও বোভেরি ক্রোমোজোম ও মেন্ডেলের উপাদানের মধ্যে মিলের কথাটি সুস্পষ্ট করেন।

প্রশ্ন ৪১। GMO কী?

উত্তর: জিন প্রকৌশলের মাধ্যমে উৎপন্ন নতুন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন জীবকে বলা হয় GMO (Genetically Modified Organism).

অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্ন ১। DNA কে বংশগতির রাসায়নিক ভিত্তি বলা হয় কেন?

উত্তর: DNA কে বংশগতির রাসায়নিক ভিত্তি বলা হয় কারণ DNA ক্রোমোজোমের প্রধান উপাদান এবং বংশগতির রাসায়নিক ভিত্তি। DNA ই জীবের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের প্রকৃত ধারক এবং বাহক যা জীবের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সরাসরি বহন করে মাতাপিতা থেকে তাদের বংশধরে নিয়ে যায়।

 

প্রশ্ন ২। মেন্ডেলকে বংশগতির জনক বলা হয় কেন?

উত্তর: জিনতত্ত্বে মেন্ডেলের অবদান অপরিসীম। চেক প্রজাতন্ত্রবাসী ধর্মযাজক গ্রেগর জোহান মেন্ডেল দীর্ঘ সাত বছর Pisum sativum নামক মটরশুঁটি গাছের উপর নানান পরীক্ষা- নিরীক্ষা চালিয়ে বংশগতির উপর সতর্ক ও একনিষ্ঠ কাজের মাধ্যমে দুটি মৌলিক সিদ্ধান্তে উপনীত হন। মেন্ডেল প্রদত্ত তত্ত্বগুলোকে বর্তমানে বংশগতিবিদ্যার ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়। এসব কারণে মেন্ডেলকে জিনতত্ত্বের জনক বলা হয়।

 

প্রশ্ন ৩। জিনকে বংশগতির ধারক বলা হয় কেন?

উত্তর: জীবের সব দৃশ্য ও অদৃশ্যমান লক্ষণ বা বৈশিষ্ট্য ধারণ ও নিয়ন্ত্রণ করে জিন। সাধারণত একটি বৈশিষ্ট্যের জন্য একটি নির্দিষ্ট জিন থাকে এবং কোনো ক্ষেত্রে একটি বৈশিষ্ট্যের জন্য একাধিক জিনও থাকতে পারে। নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য ধারণকারী জিন পিতা-মাতা হতে বৈশিষ্ট্যসমূহ সন্তান-সন্ততিতে স্থানান্তরিত করে। এজন্যই জিনকে বংশগতির ধারক বলা হয়।

 

প্রশ্ন ৪। মেন্ডেলের কৃতকার্য হওয়ার কারণগুলো লিখ।

উত্তর: মেন্ডেলের কৃতকার্য হওয়ার কারণগুলো হলো-

i. মেন্ডেলের পরীক্ষায় ব্যবহৃত উদ্ভিদগুলো সবই ছিল বিশুদ্ধ অর্থাৎ হোমোজাইগাস।

ii. তার ব্যবহৃত মটরশুঁটি স্ব-পরাগী ফুল, তাই বাইরের কোনো বৈশিষ্ট্যের মিশ্রণ ঘটেনি। ফলে পরীক্ষায় ভুল হবার সম্ভাবনা কম ছিল।

iii. মটরশুঁটির ডিপ্লয়েড কোষের প্রতি জোড়া ক্রোমোজোম ভিন্ন ভিন্ন ক্রোমোজোমে উপস্থিত ছিল, তাই কোনো সমস্যা হয়নি।

iv. গাণিতিক ও পরিসংখ্যানিক ভিত্তিতে মেন্ডেল তাঁর ফলাফল এর অর্থপূর্ণ ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন।

 

প্রশ্ন ৫। প্রকট বৈশিষ্ট্য বলতে কী বুঝায়?

উত্তর: এক জোড়া বিপরীত বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন জীবে সংকরায়ণ ঘটালে প্রথম অপত্য বংশে (F) শংকর জীবে ঐ বৈশিষ্ট্য দুটির যে একটি প্রকাশিত হয় অর্থাৎ মাতা-পিতা হতে প্রথম বংশধরে জীবের যে বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায় তাকে প্রকট বৈশিষ্ট্য বলে।

 

প্রশ্ন ৬। মেন্ডেলের ১ম সূত্রকে পৃথকীকরণ সূত্র বলা হয় কেন?

উত্তর: মেন্ডেলের ১ম সূত্রটি হচ্ছে-সংকর জীবে বিপরীত বৈশিষ্ট্যের ফ্যাক্টরগুলো (জিনগুলো) মিশ্রিত বা পরিবর্তিত না হয়ে পাশাপাশি অবস্থান করে এবং জননকোষ (গ্যামেট) সৃষ্টির সময় পরস্পর থেকে পৃথক হয়ে ভিন্ন ভিন্ন জননকোষে প্রবেশ করে। বিপরীত বৈশিষ্ট্যের ফ্যাক্টরগুলো গ্যামিট সৃষ্টির সময় পৃথক হয়ে যায় বলেই মেন্ডেলের ১ম সূত্রকে পৃথকীকরণ সূত্র বা Law of segregation বলা হয়।

 

প্রশ্ন ৭। সংকর জীব বলতে কী বুঝ?

উত্তর: দুটি ভিন্ন প্রজাতির মধ্যে আন্তঃপ্রজননের ফলে উদ্ধৃত নতুন প্রজন্মকে ঐ দুই প্রজাতির সংকর বলে। সংকর করার প্রক্রিয়াটিকে সংকরায়ণ বলে। সংকর জীব তাদের নিজস্ব গুণাবলির অধিকারী হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে সংকর জীবটি তার পিতামাতা থেকে ভিন্ন এবং উন্নত বৈশিষ্ট্যও হতে পারে।

 

প্রশ্ন ৮। ক্রোমোজোমকে বংশগতির ভৌত ভিত্তি বলা হয় কেন?

উত্তর: বংশগতির প্রধান উপাদান হচ্ছে ক্রোমোজোম।

ক্রোমোজোমে অসংখ্য অতি সূক্ষ্ম জিন থাকে যা জীবের বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণ করে। ক্রোমোজোম এসব বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী জিনে মাতাপিতা থেকে সন্তান-সন্ততিতে বহন করে নিয়ে যায়। মানুষের চোখের রং, চুলের আকৃতি, চামড়ার গঠন ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য ক্রোমোজোম কর্তৃক বাহিত হয়ে বংশগতির ধারা অক্ষুণ্ণ রাখে। এ কারণে ক্রোমোজোমকে বংশগতির ভৌত ভিত্তি বলা হয়।

 

প্রশ্ন ৯। জীবের বৈশিষ্ট্য কীভাবে বংশপরম্পরায় বাহিত হয়?

উত্তর: জীবের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী জিনসমূহ প্রজননের মাধ্যমে পিতামাতা থেকে বংশানুক্রমে সন্তান-সন্ততির দেহে সঞ্চারিত হওয়ার প্রক্রিয়াকে বংশগতি বলে। এ প্রক্রিয়ায় পিতা- মাতার বিশেষ লক্ষণগুলো নির্ভুলভাবে সন্তান-সন্ততির মধ্যে স্থানান্তরিত হয়। আমরা জানি ক্রোমোজোম হচ্ছে বংশগতির প্রধান বস্তু যা অসংখ্য অতি সূক্ষ্ম জিন দ্বারা গঠিত। এসব জিন রাসায়নিকভাবে DNA দ্বারা গঠিত। এ DNA জীবের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য যেমন- এদের রং, আকার, স্বভাব, পরিব্যাপ্তি ইত্যাদি ধারণ করে যা বংশানুক্রমে মাতা-পিতা থেকে সন্তান-সন্ততিতে স্থানান্তরিত হয়।

 

প্রশ্ন ১০। লিঙ্গ নির্ধারণে ক্রোমোজোম কীভাবে ভূমিকা রাখে?

উত্তর: লিঙ্গ নির্ধারণে ক্রোমোজোম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মানবদেহে ২৩ জোড়া ক্রোমোজোমের মধ্যে ১ জোড়া অর্থাৎ X ও Y ক্রোমোজোম মানুষের লিঙ্গ নির্ধারণ করে থাকে। বাবার XY থেকে যে কোনো একটি ও মায়ের XX থেকে যে কোনো একটি ক্রোমোজোম মিলিত হয়ে পুত্র/কন্যা সন্তান হয়।

 

প্রশ্ন ১১। ছেলে সন্তান কিভাবে পিতার বৈশিষ্ট্য অর্জন করে?

উত্তর: ছেলে সন্তান হওয়ার জন্য অবশ্যই পিতার Y ক্রোমোজোম স্থানান্তরিত হতে হবে। পিতার Y ক্রোমোজোম ও মাতার X ক্রোমোজোমবাহী জনন কোষ মিলনের মাধ্যমে জাইগোট গঠিত হয়। এই জাইগোটের মধ্যে পিতার জিনগুলো প্রকট হয়ে সন্তান সন্ততিতে বৈশিষ্ট্য আকারে প্রকাশ পায়। এভাবে ছেলে সন্তান তার পিতার বৈশিষ্ট্য অর্জন করে।

 

প্রশ্ন ১২। প্রচলিত প্রজনন ও জিন প্রকৌশল এর মধ্যে কোনটি বেশি কার্যকর এবং কেন?

উত্তর: প্রচলিত প্রজননের তুলনায় জিন প্রকৌশল অধিক কার্যকর। কারণ প্রচলিত প্রজনন প্রক্রিয়ায় জিন স্থানান্তর একই অথবা খুব নিকটবর্তী প্রজাতির মাঝে সীমাবদ্ধ। কিন্তু জিন প্রকৌশলের মাধ্যমে নিকটবর্তী বা দূরবর্তী যেকোনো প্রজাতির মাঝে এক বা একাধিক জিন সরাসরি স্থানান্তর করা সম্ভব। প্রচলিত প্রজননে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জন করতে অনেক সময়ের প্রয়োজন। কিন্তু জিন প্রকৌশলের সাহায্যে খুব দ্রুত কাঙ্ক্ষিত বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন উদ্ভিদ, প্রাণী বা অণুজীব পাওয়া সম্ভব। এসব কারণেই মূলত প্রচলিত প্রজননের তুলনায় জিন প্রকৌশল অধিক কার্যকর।

 

প্রশ্ন ১৩। কোনো প্রজাতির বৈশিষ্ট্য কীভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়?

উত্তর: এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে মাতা-পিতার বৈশিষ্ট্য স্থানান্তরের প্রক্রিয়া বংশগতি নামে পরিচিত। বংশগতির মৌলিক একক হলো জিন। কোষের ক্রোমোজোমে যে DNA থাকে সেখানে জীবের জিনগুলো সজ্জিত থাকে। এই জিন দ্বারাই প্রজাতির বৈশিষ্ট্য প্রকাশিত এবং নিয়ন্ত্রিত হয়।

 

প্রশ্ন ১৪। "দুটি জিন একসঙ্গে থাকলেও তারা স্বকীয়তা বজায় রাখে"-- বিষয়টি নিয়ে তোমার মতামত দাও।

উত্তর: দুটি জিন একসঙ্গে থাকলেও তারা স্বকীয়তা বজায় রাখে বিষয়টিতে আমি একমত পোষণ করি। দুটি অ্যালিল এক সাথে থেকে F1, বংশধরে প্রকট অ্যালিল প্রকাশিত হলেও F বংশধরে প্রকট অ্যালিলটির পাশাপাশি প্রচ্ছন্ন অ্যালিলটির বৈশিষ্ট্য প্রকাশিত হয়। তাই উভয় জিন দীর্ঘকাল একসঙ্গে থাকলেও বিনষ্ট বা একীভূত হয়ে যায় না বরং স্বকীয়তা বজায় রেখে অক্ষুণ্ণ থাকে।

 

প্রশ্ন ১৫। ক্রোমোজোম ও মেন্ডেলের উপাদানের মধ্যে কোনো মিল আছে বলে কি তুমি মনে কর?

উত্তর: ক্রোমোজোম ও মেন্ডেলের উপাদানের মধ্যে মিল আছে বলে আমি মনে করি। এই বিষয়টি ১৯০২ সালে বিজ্ঞানী সাটন ও বোভেরি পৃথকভাবে ক্রোমোজোম ও মেন্ডেলের উপাদানের মধ্যে মিলের কথাটি সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন। এই বিষয়টি নিয়ে তারা এক যুগ গবেষণা করেন। এই গবেষণা করে তারা সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে মেন্ডেলের ফ্যাক্টর ও ক্রোমোজোম অনেক দিক দিয়ে একই রকম আচরণ করে।

 

প্রশ্ন ১৬। বংশগতির ক্রোমোজোম তত্ত্ব বলতে কী বুঝ?

উত্তর: জিন ও ক্রোমোজোম অনেক দিক দিয়ে একই রকম আচরণ করে। তাছাড়া বংশগতি নির্ধারণের সময় জিন ও ক্রোমোজোম অভিন্ন আচরণ প্রদর্শন করে। একেই বংশগতির ক্রোমোজোম তত্ত্ব বলা হয়।

 

ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণমূলক প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্ন ১। 9:3:3:1 অনুপাতটি মেন্ডেলের ২য় সূত্র অনুসারে ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: এ সূত্র প্রমাণের জন্য মেন্ডেল দু জোড়া বিপরীতধর্মী লক্ষণসম্পন্ন উদ্ভিদের মধ্যে পরাগসংযোগ ঘটান। এমন দুটি শুদ্ধ লক্ষণযুক্ত (হোমোজাইগাস) মটরশুঁটি গাছ নেওয়া হলো যার একটি গোল ও হলুদ বর্ণের বীজ এবং অন্যটি  ‍কুঞ্চিত ও সবুজ বর্ণের বীজ উৎপাদনে সক্ষম।


ধরা যাক, হলুদ লক্ষণের জিনের প্রতীক হচ্ছে Y (বড়ো অক্ষরের),

সবুজ লক্ষণের জিনের প্রতীক হচ্ছে y (ছোটো অক্ষরের)

বীজের গোল লক্ষণের জিনের প্রতীক হচ্ছে R,

কুঞ্চিত লক্ষণের, জিনের প্রতীক হচ্ছে r,

এবং প্রথম প্রজন্ম হচ্ছে F, দ্বিতীয় প্রজন্ম হচ্ছে F2.

 

প্রতি জিনের জন্য দুটি করে অ্যালিল হিসেবে হলুদ (YY) বর্ণের ও গোল (RR) বীজযুক্ত উদ্ভিদের জিনোটাইপ হবে YYRR এবং সবুজ (yy) ও কুঞ্চিত (rr) বর্ণের বীজযুক্ত উদ্ভিদের জিনোটাইপ হবে yyrr। কাজেই শুদ্ধ লক্ষণযুক্ত দুইটি বীজের আকার এবং বর্ণের জন্য YYRR এবং yyrr জিনোটাইপের দুটি গাছের সংকরায়ণ করে যে অপত্য গাছ পাওয়া যাবে তার F1, প্রজন্মের জিনোটাইপ হবে YyRr। যেহেতু হলুদ বর্ণের (Y) এবং গোলাকার (R) আলিল, সবুজ (y) এবং কুঞ্চিত (r) বর্ণের অ্যালিলের উপর প্রকট তাই F1 বংশধরের সবকটি গাছের বীজ হবে গোলাকৃতির এবং হলুদ বর্ণের।

দ্বিতীয় সংকরায়ণের সময় F1, বংশধরের YyRr জিনোটাইপের পুং ও স্ত্রী জননকোষ হতে পারে YR, Yr, yR এবং yr, এগুলো পরাগায়নের মাধ্যমে মিলিত হয়ে 4×4 = 16 ধরনের জিনোটাইপ তৈরি করতে পারে। যেহেতু গোলাকার (R) এবং হলুদ বর্ণের (Y) অ্যালিল, কুঞ্চিত (r) এবং সবুজ (y) বর্ণের অ্যালিলের উপর প্রকট তাই 16 ধরনের জিনোটাইপের ভেতর ফিনোটাইপ গোল হলুদ 9 বার, কুঞ্চিত-হলুদ 3 বার, গোল-সবুজ 3 বার এবং কুঞ্চিত-সবুজ1 বার পাওয়া যায়। অর্থাৎ এদের অনুপাত 9:3:3:1, ঠিক যেমনটি মেন্ডেল দেখিয়েছেন।

 

প্রশ্ন ২। লাল ফুল (RR) × সাদা ফুল (rr) লাল ফুল বিষয়টি মেন্ডেলের প্রথম সূত্রের সাহায্যে ব্যাখ্যা কর।


উত্তর
: প্রশ্নে লাল ফুল (RR) এবং সাদা ফুল (rr) এর মধ্যে ক্রস দেখানো হয়েছে যেখানে F1, বংশধরে লাল ফুলের জিন প্রকট হওয়ায় সব ফুল লাল হয়। পরবর্তীতে F2 বংশধরে ৩ ভাগ লাল ফুল এবং ১ ভাগ সাদা ফুল পাওয়া যায়। অর্থাৎ তাদের অনুপাত দাঁড়ায় ৩: ১; যা মেন্ডেলের প্রথম সূত্রকে সমর্থন করে। নিচে F জনুর ফলাফল দেখানো হলো-

লাল ফুলের জিনোটাইপ = RR এবং

সাদা ফুলের জিনোটাইপ = rr

 

এখানে লাল ফুলের অ্যালিলটি প্রকট হওয়ায় F, বংশধরের সব ফুল লাল হয় এবং সাদা ফুলের অ্যালিলটি প্রচ্ছন্ন হওয়ায় তা F বংশধরে প্রকাশ পাবে।

 প্রশ্ন ৩। বিশুদ্ধ কালো গিনিপিগের সাথে বিশুদ্ধ বাদামি গিনিপিগের ক্রস ঘটিয়ে F1, ও F2 জনুক্রম ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: ধরি,

কালো বর্ণের জন্য দায়ী জিন B এবং

বাদামি বর্ণের জন্য দায়ী জিন b।

তাহলে বিশুদ্ধ (হোমোজাইগাস) কালো বর্ণের জিনোটাইপ হবে BB এবং

বিশুদ্ধ বাদামি বর্ণের জিনোটাইপ হবে bb।

F1, জনু প্রথম বংশধর এবং F2 জনু দ্বিতীয় বংশধর।

এখানে একটি হোমোজাইগাস বা বিশুদ্ধ কালো (BB) বর্ণের গিনিপিগের সাথে অপর একটি বিশুদ্ধ বাদামি (bb) বর্ণের গিনিপিগের সংকরায়ণ ঘটালে F1 জনুতে সকল অপত্য গিনিপিগের বর্ণই হবে কালো (Bb)। কারণ, কালো বর্ণের অ্যালিল (B) বাদামি বর্ণের অ্যালিল (b)-এর উপর প্রকট গুণসম্পন্ন। উভয় জিন দীর্ঘকাল একসঙ্গে থাকলেও বিনষ্ট বা একীভূত হয়ে যায় না বরং স্বকীয়তা বজায় রেখে অক্ষুণ্ণ থাকে। F জনুতে উৎপন্ন অপত্য গিনিপিগের মধ্যে ৩টি কালো এবং ১টি বাদামি বর্ণের গিনিপিগের সৃষ্টি হয়, অর্থাৎ ফিনোটাইপের ভিত্তিতে F2 জনুতে গিনিপিগের কালো ও বাদামি বর্ণের অনুপাত হয় যথাক্রমে ৩:১।

নিচে ব্যাখ্যা করা হলো-



উদ্দীপকের বিশুদ্ধ কালো (BB) ও বিশুদ্ধ বাদামি (bb) ক্রসের ফলে হেটারোজাইগাস বা সংকর কালো বর্ণের গিনিপিগ (Bb) উৎপন্ন হবে।

F জনুর ফলাফল:


প্রশ্ন ৪। জিনতত্ত্ব ও বংশগতিবিদ্যার সম্পর্ক ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: বংশগতি হলো বাবা-মা হতে বংশানুক্রমে সন্তান-সন্ততিতে জিনগত বৈশিষ্ট্য স্থানান্তরিত হওয়া। এর ফলে বাবা- মায়ের সঙ্গে সন্তানের অনেক মিল খুঁজে পাওয়া যায়। জিনতত্ত্ব শাখায় বংশগতি সম্পর্কিত নানাবিধ বিষয়াদির বিজ্ঞানভিত্তিক আলোচনা করা হয়। গ্রেগর জোহান মেন্ডেল তাঁর সংকরায়ণ পরীক্ষার ফল থেকে বুঝতে পারেন যে কোনো জীবের প্রতিটি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য একটি উপাদান দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হয়। এ উপাদান জীবদেহে জোড়ায় জোড়ায় অবস্থান করে এবং হ্যাপ্লয়েড গ্যামেট গঠনকালে ঐ উপাদান সংখ্যায় অর্ধেক হয়ে যায়। কিন্তু উপাদানটি কী, গ্যামেটের কোথায় এটি অবস্থিত এবং এসব উপাদান কীভাবে বংশপরম্পরায় বৈশিষ্ট্যগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে- এসব বিষয়ে মেন্ডেল অবগত ছিলেন না। মেন্ডেল তত্ত্বের পুনরাবিষ্কারের পর ক্রোমোজোম ও মেন্ডেলের উপাদানের মধ্যে বেশ কিছু মিল দেখতে পাওয়া যায়। প্রত্যেকটি ক্রোমোজোমের আকৃতি ও দৈর্ঘ্য আলাদা আলাদা এবং দেহকোষে সেগুলো জোড়ায় জোড়ায় থাকে। জোড়ার একটি পিতার কাছ থেকে, অপরটি মায়ের কাছ থেকে পাওয়া। মেন্ডেল একটি বৈশিষ্ট্যের জন্য একজোড়া ফ্যাক্টর বা উপাদানের কথা বলেছিলেন, যার একটি পিতা ও একটি মাতার কাছ থেকে আসে, যেমনটি ক্রোমোজোমের ক্ষেত্রে ঘটে থাকে। বিজ্ঞানী সাটন ও বোভেরি পৃথকভাবে ক্রোমোজোম ও মেন্ডেলের উপাদানের মধ্যে মিলের কথাটি সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন। এ নিয়ে প্রায় এক যুগ ধরে বিভিন্ন জীবজন্তুর উপর গবেষণা চলছে। পরে দেখা গেল যে মেন্ডেলের উপাদান বা জিনের অবস্থান ক্রোমোজোমে, তাই বংশানুক্রমিক গতিপ্রকৃতির বিষয়ে ক্রোমোজোম আর উপাদানের মধ্যে এত সাদৃশ্য। গবেষণার ফলাফল থেকে তাঁরা সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে জিন ও ক্রোমোজোম অনেক দিক দিয়ে একই রকম আচরণ করে। তাছাড়া বংশগতি নির্ধারণের সময় জিন ওক্রোমোজোম অভিন্ন আচরণ প্রদর্শন করে।

 

চিন্তন দক্ষভত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর 

প্রশ্ন ১। মেন্ডেল তার গবেষণায় মটরশুঁটি উদ্ভিদকে কেন নির্বাচন করেন? ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: গ্রেগর জোহান মেন্ডেল ১৮৫৬ সালে তাঁর গবেষণার জন্য মটরশুঁটি উদ্ভিদকে নির্বাচন করেন। এই গাছকে নমুনা হিসেবে মনোনীত করার পিছনে বেশ কিছু কারণ ছিল। যেমন-

i. এই গাছ একবর্ষজীবী হওয়ায় খুব কম সময়ের মধ্যেই পরীক্ষার ফল পাওয়া যায়।

ii. এটি উভলিঙ্গী উদ্ভিদ এবং স্বপরাগায়ণের মাধ্যমে যৌন প্রজজন সম্পন্ন করে।

iii. ফুল বড়ো হওয়ায় অতি সহজেই সংকরায়ণ ঘটানো যায়।

iv. দলমণ্ডল সুসজ্জিত তাই পরনিষেকের সম্ভাবনা নেই। তাই উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্যগুলো খাঁটি বা বিশুদ্ধ অবস্থায় থাকে।

V. একাধিক তুলনামূলক বিপরীত বৈশিষ্ট্য থাকায় অপত্য বংশে কয়েকটি বৈশিষ্ট্যের স্পষ্ট প্রকাশ পরীক্ষার ক্ষেত্রে সহায়ক হয়।

vi. সৃষ্ট বংশধর উর্বর হওয়ায় নিয়মিত বংশবৃদ্ধি করতে পারে।

তাই মেন্ডেল তার গবেষণায় অন্য কোনো উদ্ভিদ ব্যবহার না করে মটরশুঁটি উদ্ভিদ নির্বাচন করেন।

প্রশ্ন ২। চিত্রটি দেখে প্রশ্নটির উত্তর দাও।

 
উল্লিখিত A ও B তে ক্রোমোজোম সংখ্যা এক সেট (n) হয় কেন? ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: প্রশ্নে উল্লিখিত A ও B তে যথাক্রমে মানুষের সেক্স ক্রোমোজোম অর্থাৎ মাতা (XX) এবং পিতার (XY) ক্রোমোজোমকে বুঝানো হয়েছে। আমরা জানি, মাতাপিতার বৈশিষ্ট্য ক্রোমোজোমে অবস্থিত জিনের মাধ্যমে তাদের সন্তান- সন্ততিতে সঞ্চারিত হয়। মাতা-পিতার দেহে হ্যাপ্লয়েড কোষ ডিম্বাণু (n) এবং শুক্রাণু (n) তৈরি হয়। মিয়োসিস প্রক্রিয়ায় বিভাজিত হওয়ায় ক্রোমোজোম সংখ্যা জনন মাতৃকোষে অর্ধেক হয়ে যায়। ফলে শুক্রাণু ও ডিম্বাণু কোষদ্বয় মিলিত হয়ে যে জাইগোট সৃষ্টি করে তাতে ক্রোমোজোম সংখ্যা পুনরায় জনন মাতৃকোষের সমান হয়ে যায়। ডিম্বাণু ও শুক্রাণু উভয়ই হ্যাপ্লয়েড (n) বিশিষ্ট ক্রোমোজোম বহন করে কিন্তু জাইগোট ডিপ্লয়েড (2n)। অর্থাৎ জনন মাতৃকোষে মিয়োসিস প্রক্রিয়া না ঘটে যদি মাইটোসিস হতো তবে ক্রোমোজোম সংখ্যা মাতৃকোষ অপেক্ষা দ্বিগুণ হয়ে যেত। ফলে প্রজাতির ধারাবাহিকতা বজায় থাকত না। তাই A ও B তে ক্রোমোজোম সংখ্যা দুই সেট (2n) না হয়ে এক সেট (n) হয়।

প্রশ্ন ৩। লম্বা বৈশিষ্ট্য TT × খাটো বৈশিষ্ট্য tt এ সংঘটিত প্রক্রিয়ায় F1 ও F2 উদ্ভিদে কীরূপ ফলাফল ঘটবে? ব্যাখ্যা কর।

উত্তরপ্রশ্নে সংঘটিত প্রক্রিয়ায় F1, ও F জনুর ফলাফল নিম্নে বিশ্লেষণ করা হলো-

উদ্দীপকে বিশুদ্ধ লম্বা গাছের জিনোটাইপ = TT এবং

বিশুদ্ধ খাটো গাছের জিনোটাইপ = tt


সুতরাং উল্লিখিত ফলাফল অনুসারে দেখা যায় যে, বিশুদ্ধ লম্বা ও বিশুদ্ধ খাটো উদ্ভিদের সংকরায়ণের ফলে F1, বংশধরে সৃষ্ট সকল উদ্ভিদ হবে লম্বা। আবার F1 বংশধরের লম্বা উদ্ভিদের মধ্যে সংকরায়ণ ঘটালে F বংশধরে সৃষ্ট উদ্ভিদের মধ্যে তিনটি হবে লম্বা এবং একটি হবে বিশুদ্ধ খাটো।

 

প্রশ্ন ৪। সুজানা থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত। ডাক্তার বললেন রোগটি তার বাবা-মায়ের কাছ থেকে তার দেহে সঞ্চালিত হয়েছে। বিষয়টি জিনতত্ত্বের আলোকে ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: থ্যালাসেমিয়া রোগটি রক্তজনিত সমস্যা। এই রোগটি বংশপরম্পরায় হয়ে থাকে। তাই এই রোগটি সুজানার দেহে তার বাবা-মায়ের দেহ থেকে সঞ্চালিত হয়েছে। বিষয়টি নিম্নে জিনতত্ত্বের আলোকে ব্যাখ্যা করা হলো-

থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি তার পূর্ববর্তী বংশধর থেকে অর্থাৎ মা-বাবার থেকে থ্যালাসেমিয়ার জিন পেয়ে থাকে। আবার আক্রান্ত ব্যক্তি তার পরবর্তী সন্তানসন্ততিতে থ্যালাসেমিয়ার জিন বহন করে থাকে। যেহেতু জিনই হলো বংশগতির ধারক ও বাহক তাই সুজানার মা-বাবা দুইজনেই বা একজন তাদের পূর্ববর্তী বংশধর থেকে থ্যালাসেমিয়ার জিন পায় যা পরবর্তীতে তাদের সন্তানের (সুজানার) শরীরে প্রবেশের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। উপরোক্ত আলোচনা হতে বলা যায় যে, সুজানার থ্যালাসেমিয়া রোগটি তার বাবা-মায়ের কাছ থেকে তার দেহে সঞ্চালিত হয়েছে।

 

প্রশ্ন ৫। নিচের চিত্রটি মানুষের লিঙ্গ নির্ধারণে ভূমিকা রাখে- ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: চিত্রটি হলো ক্রোমোজোম। ক্রোমোজোম মানুষের লিঙ্গ নির্ধারণে ভূমিকা রাখে বিষয়টি নিম্নে ব্যাখ্যা করা হলো-

মানুষের লিঙ্গ নির্ধারণকারী ক্রোমোজোমকে সেক্স ক্রোমোজোম বলে। সেক্স ক্রোমোজোম দুটি X এবং ১ নামে পরিচিত। স্ত্রীলোকের দুটি ক্রোমোজোমেই X এবং পুরুষের ক্ষেত্রে দুটির মধ্যে একটি X এবং অপরটি Y ক্রোমোজোম। স্ত্রীলোকের ডিম্বাশয়ে ডিম্বাণু সৃষ্টির সময় যখন মিয়োসিস বিভাজন ঘটে তখন প্রতিটি ডিম্বাণু অন্যান্য ক্রোমোজোমের সাথে একটি X ক্রোমোজোম লাভ করে। অপরপক্ষে পুরুষ শুক্রাণু সৃষ্টির সময় অর্ধেক শুক্রাণু X এবং বাকি অর্ধেক শুক্রাণু Y ক্রোমোজোম লাভ করে। ডিম্বাণু পুরুষের X বা Y ক্রোমোজোমবাহী শুক্রাণু দ্বারা নিষিক্ত হতে পারে। ফলে জাইগোটটি XX অথবা XY ক্রোমোজোম বিশিষ্ট হতে পারে। জাইগোটটি XX হলে মেয়ে এবং XY হলে ছেলে সন্তান জন্মাবে।

তাই উপরোক্ত আলোচনা থেকে বলা যায় যে, ক্রোমোজোমেই মানুষের লিঙ্গ নির্ধারণে ভূমিকা রাখে।

 

প্রশ্ন ৬। কাজলীর বাবা ও মায়ের চুলের রং কালো হওয়া সত্ত্বেও কাজলীর চুলের রং বাদামি হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: কাজলীর বাবা ও মায়ের চুলের রং কালো হওয়া সত্ত্বেও কাজলীর চুলের রং বাদামি। কারণ কাজলীর চুলের বাদামি রংয়ের জন্য দায়ী জিন তার বাবা বা মায়ের কাছ থেকে এসেছে। কাজলীর বাবা বা মায়ের চুলের রং কালো হলেও তাদের কাছে বাদামি রং এর জন্য দায়ী জিন প্রচ্ছন্ন অবস্থায় ছিল। হয়ত কাজলীর দাদা-দাদী অথবা নানা-নানি এর কাছে বাদামি বর্ণের জন্য দায়ী জিন ছিল। যা পরবর্তীতে F জনুতে অর্থাৎ কাজলীর বাবা বা মায়ের কাছে প্রচ্ছন্ন হিসেবে অবস্থান করেছে। কিন্তু পরবর্তীতে F2 জনুতে অর্থাৎ কাজলীর নিকট তা প্রকট আকার ধারণ করে। তাই কাজলীর চুলের রং বাদামি হয়। তাই মেন্ডেলের প্রথম সূত্রকে অনুসরণ করে প্রকট ও প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্যের জন্য কাজলীর বাবা ও মায়ের চুলের রং কালো হওয়া সত্ত্বেও কাজলীর চুলের রং বাদামি হয়েছে।

 

প্রশ্ন ৭। জিনতত্ত্বের জনক মটরশুঁটির উপর গবেষণা করে দুটি সূত্র আবিষ্কার করেন। সূত্র দুটি নামসহ বিবৃতি কর।

উত্তর: প্রশ্নে জিনতত্ত্বের জনক মেন্ডেলের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি মটরশুঁটির উপর দুটি সূত্র আবিষ্কার করেন। নিচে সূত্র দুটির নামসহ বিবৃতি দেওয়া হলো-

প্রথম সূত্র: এ সূত্রকে মনোহাইব্রিড ক্রস বা জননকোষ বিশুদ্ধতার সূত্র বা পৃথকীকরণ সূত্র বলা হয়।

বিবৃতি: "সংকর জীবে বিপরীত বৈশিষ্ট্যের ফ্যাক্টরগুলো (জিনগুলো) মিশ্রিত বা পরিবর্তিত না হয়ে পাশাপাশি অবস্থান করে এবং জননকোষ (গ্যামেট) সৃষ্টির সময় পরস্পর থেকে পৃথক হয়ে ভিন্ন ভিন্ন জননকোষে প্রবেশ করে।"

দ্বিতীয় সূত্র: এ সূত্রকে স্বাধীনভাবে মিলনের বা বণ্টনের সূত্র বলা হয়।

বিবৃতি: "দুই বা ততোধিক জোড়া বিপরীত বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন জীবের মধ্যে ক্রস ঘটালে প্রথম সংকর পুরুষে (F) কেবল প্রকট বৈশিষ্ট্যগুলোই প্রকাশিত হবে। কিন্তু জননকোষ (গ্যামেট) উৎপাদনকালে বৈশিষ্ট্যগুলো জোড়া ভেঙে পরস্পর থেকে স্বতন্ত্র বা স্বাধীনভাবে বিন্যস্ত হয়ে ভিন্ন ভিন্ন জননকোষে প্রবেশ করবে।"

২টি মন্তব্য:

পেঁয়াজ কাটলে চোখ দিয়ে পানি বের হয় কেন?

  যদি আপনার কখনো জানতে ইচ্ছে করে- পেঁয়াজ কাটলে চোখ দিয়ে পানি বের হয় কেন? তবে এই লেখাটি আপনার জন্য। ঠিক আছে, আসুন একটু বিস্তারিতভাবে দেখি। ...