পদার্থে র গঠন : অণু, পরমাণু শীর্ষক লেখায় আমরা জেনেছি যে গঠন অনুসারে পৃথিবীর সকল পদার্থকে মৌলিক ও যৌগিক এ দুই শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। এ পর্যন্ত মোট মৌলিক পদার্থের সংখ্যা কত মনে পড়ে কি? হ্যাঁ, ১১৮টি। মৌলিক পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণার নাম পরমাণু বা অ্যাটম। মৌলিক ও যৌগিক পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণা যা স্বাধীনভাবে থাকতে পারে তার নাম অণু। একাধিক পরমাণুর সমন্বয়ে অণু গঠিত। এ লেখায় আমরা মৌলিক ও যৌগিক পদার্থের প্রতীক, সংকেত এবং যোজনী সম্বন্ধে জানবো ।
প্রতীক
রসায়নবিদগণ মৌলের নামকে সংক্ষেপে প্রকাশ করার একটি পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন। এ পদ্ধতিতে কোনো মৌলের পুরো নাম না লিখে ইংরেজি বা ল্যাটিন নামের একটি বা দুইটি অক্ষর দিয়ে সংক্ষেপে মৌলটিকে প্রকাশ করা হয়। মৌলের পুরো নামের সংক্ষিপ্ত রূপকে প্রতীক বলা হয়। যেমন হাইড্রোজেন (H), অক্সিজেন (O), নাইট্রোজেন (N) ইত্যাদি ।
প্রতীক লেখার নিয়ম
১। সাধারণত মৌলিক পদার্থের ইংরেজি
নামের প্রথম অক্ষরটিকে বড় হরফে লিখে মৌলটির প্রতীকরূপে প্রকাশ করা হয়। যেমন-
ছক: মৌলের
প্রতীক
ইংরেজি
নাম |
প্রতীক |
ইংরেজি
নাম |
প্ৰতীক |
||
হাইড্রোজেন |
(Hydrogen) |
H |
সালফার |
(Sulphur) |
S |
অক্সিজেন |
(Oxygen) |
O |
বোরন |
(Boron) |
B |
নাইট্রোজেন |
(Nitrogen) |
N |
ফসফরাস |
(Phosphorus) |
P |
কার্বন |
(Carbon) |
C |
ইউরেনিয়াম |
(Uranium) |
U |
ফ্লোরিন |
(Flourine) |
F |
আয়োডিন |
(Iodine) |
I |
ছক: বিভিন্ন
মৌলের প্রতীক
মৌলের ইংরেজি
নাম |
প্রতীক |
মৌলের ইংরেজি
নাম |
প্রতীক |
||
কার্বন |
(Carbon) |
C |
বোরন |
(Boron) |
B |
ক্যালসিয়াম |
(Calcium) |
Ca |
বেরিয়াম |
(Barium) |
Ba |
কোবাল্ট |
(Cobalt) |
Co |
বিসমাথ |
(Bismuth) |
Bi |
ক্যাডমিয়াম |
(Cadmium) |
Cd |
ব্রোমিন |
(Bromin) |
Br |
ক্লোরিন |
(Chlorine) |
CI |
বেরিলিয়াম |
(Beryllium) |
Be |
ছক: বিভিন্ন
মৌলের প্রতীক
ইংরেজী
নাম/ ল্যাটিন নাম |
প্রতীক |
ইংরেজী
নাম/ ল্যাটিন নাম |
প্রতীক |
||
সোডিয়াম |
(Sodium) Natrium |
Na |
সিলভার |
(Silver) Argentum |
Ag |
পটাসিয়াম |
(Potassium) Kalium |
K |
লেড |
(Lead) Plumbum |
Pb |
কপার |
(Copper) Cuprum |
Cu |
টিন |
(Tin) Stannum |
Sn |
আয়রন |
(Iron) Ferrum |
Fe |
মার্কারী |
(Mercury) Hydrargyrum |
Hg |
গোল্ড |
(Gold) Aurum |
Au |
|
|
|
প্রতীকের তাৎপর্য
(১) মৌলের প্রতীক মৌলিক পদার্থটির
নাম সংক্ষেপে প্রকাশ করে। যেমন- হাইড্রোজেন H, অক্সিজেন O, সোডিয়াম
Na দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
(২) মৌলের প্রতীক মৌলের একটি পরমাণুকে
নির্দেশ করে যেমন- হাইড্রোজেনের একটি পরমাণুর পরিবর্তে H লেখা
হয় । সেভাবে অক্সিজেনের একটি পরমাণুকে O, কার্বনের একটি পরমাণুকে C, সোডিয়ামের
একটি পরমাণুকে Na ইত্যাদি দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
(৩) কোনো মৌলের প্রতীক ঐ মৌলের পারমাণবিক
ভর প্রকাশ করে। যেমন- H দ্বারা ১ ভাগ ভরের হাইড্রোজেন এবং O দ্বারা
১৬ ভাগ ভরের অক্সিজেনকে প্রকাশ করা হয় ।
সংকেত
কোনো মৌলিক বা যৌগিক পদার্থের অণুর সংক্ষিপ্তরূপকে সংকেত বলা হয়। অর্থাৎ কোনো পদার্থের অণুতে কী কী মৌল আছে এবং প্রতিটি মৌলের কতটি পরমাণু আছে তার সংক্ষিপ্ত প্রকাশকে ঐ পদার্থটির সংকেত বলে।
মৌলিক পদার্থের সংকেত
মৌলিক পদার্থের সংকেত লেখার সময়
মৌলের প্রতীকের ডানদিকে একটু নিচে মৌলটির একটি অণুতে যে কয়টি পরমাণু আছে সেই সংখ্যাটি
লিখে মৌলের সংকেত প্রকাশ করা হয়। যেমন- হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন ও ক্লোরিন
এর প্রত্যেকটি অণুতে দুইটি করে পরমাণু আছে। অতএব এগুলোর সংকেত হল H2,
O2, N 2, Cl2 । ওজোন, সালফার ও ফসফরাসের অণুর সংকেত যথাক্রমে O3,
S6 ও P4। আবার সোডিয়াম, পটাসিয়াম, কপার,
হিলিয়াম, আর্গন প্রভৃতি মৌলের অণু ১টি করে পরমাণু দিয়ে গঠিত। তাদের সংকেত যথাক্রমে
Na, K, Cu, He ও Ar। আবার
অসংযুক্ত ও পরস্পর হতে বিচ্ছিন্ন কোনো মৌলের সংকেত প্রকাশ করতে হলে ঐ মৌলের প্রতীকের
বাম পাশে পরমাণুর মোট সংখ্যা চিহ্ন বসাতে হয়। যেমন- 2H দ্বারা
দুইটি অসংযুক্ত হাইড্রোজেন পরমাণু বুঝায় কিন্তু H2 দ্বারা হাইড্রোজেনের একটি অণু এর
দুইটি পরমাণু দ্বারা গঠিত বুঝায়।
যৌগিক পদার্থের সংকেত
যৌগিক পদার্থের অণু একাধিক মৌলিক পদার্থের পরমাণুর সমন্বয়ে গঠিত। অতএব এ অণুর মধ্যে পরমাণুগুলো এক রকমের নয়। যে যে মৌলের পরমাণু নিয়ে যৌগিক অণু গঠিত সেগুলোর প্রতীক পাশাপাশি লিখে প্রতিটি মৌলের পরমাণু সংখ্যা সেই প্রতীকের ডানে একটু নিচে লিখে যৌগের সংকেত সংক্ষেপে প্রকাশ করা হয়। যেমন, পানির একটি অণু হাইড্রোজেনের ২টি ও অক্সিজেনের ১ টি পরমাণু নিয়ে গঠিত; সুতরাং পানির অণুর সংকেত H2O। যৌগের অণুতে কোনো মৌলের ১টি পরমাণু থাকলে ঐ পরমাণুর প্রতীকের পাশে সংখ্যা চিহ্ন ১ লেখা হয় না। কারণ প্রতীক দ্বারা ১টি পরমাণু বুঝায়। তাই পানির অণুর সংকেত লেখার সময় অক্সিজেন প্রতীকের ডান পাশে এর পরমাণু সংখ্যাটি লেখা হয়নি।
যৌগিক পদার্থের নাম |
অণুর সংকেত |
কার্বন ডাইঅক্সাইড |
CO2 |
অ্যামোনিয়া |
NH3 |
সোডিয়াম ক্লোরাইড
(খাবার লবণ) |
NaCl |
জিঙ্ক অক্সাইড |
ZnO |
ক্যালসিয়াম কার্বনেট
বা চুনাপাথর |
CaCO3 |
এবার উপরের সংকেতগুলো দেখে বলতো কোন
মৌলের কতটি পরমাণু নিয়ে প্রতিটি যৌগ অণু গঠিত ?
সংকেতের তাৎপর্য : সংকেত থেকে পদার্থের গুণগত ও পরিমাণগত কয়েকটি তথ্য জানা যায়। যেমন-
গুণগত তথ্য
(i) সংকেত
দ্বারা পদার্থটি কী তা বুঝা যায় যেমন- H2O দ্বারা পানি বুঝা যায় ।
(ii) সংকেত
দ্বারা পদার্থটি কী কী মৌলের পরমাণু নিয়ে গঠিত তা জানা যায়। যেমন, NaCl দ্বারা
বুঝা যায় যে সোডিয়াম ক্লোরাইড, সোডিয়াম ও ক্লোরিন মৌল দ্বারা গঠিত।
পরিমাণগত তথ্য
(i) সংকেত
পদার্থের একটি অণুকে বুঝায়। যেমন- NaCl দ্বারা সোডিয়াম ক্লোরাইডের একটি
অণুকে বুঝায় ।
(ii) প্রতিটি
মৌলের কোনটির কতটি পরমাণু নিয়ে পদার্থের অণুটি গঠিত তা সংকেত থেকে বুঝা যায়। যেমন,
CO2 দ্বারা বুঝা যায় যে, কার্বন ডাইঅক্সাইড অণু একটি
কার্বন ও দুইটি অক্সিজেন পরমাণু দ্বারা গঠিত ।
(iii) সংকেত
দ্বারা পদার্থটির আণবিক ভর বুঝায়। আবার ঐ ভরের মধ্যে উপাদান মৌলগুলোর আপেক্ষিক ভরের
অনুপাত কত তাও জানা যায় । CO2 থেকে জানা যায় কার্বন ডাইঅক্সাইডের
আণবিক ভর, ১২ + (১৬ × ২) = ৪৪। এ ভরের মধ্যে কার্বন ও অক্সিজেনের ভরের অনুপাত ১২: ৩২
বা ৩:৮।
ছক: প্রতীক
ও সংকেতের পার্থক্য
সংকেত |
প্রতীক |
১। মৌলিক পদার্থের নামের সংক্ষিপ্ত
রূপ প্রতীক দ্বারা প্রকাশ পায় । |
১। মৌলিক বা যৌগিক পদার্থের নামের
সংক্ষিপ্ত রূপ সংকেত দ্বারা প্রকাশ পায় । |
২। প্রতীক মৌলের একটি পরমাণুকে
নির্দেশ করে। |
২। সংকেত পদার্থের একটি অণুকে নির্দেশ
করে । |
৩। মৌলের প্রতীক ঐ মৌলের পারমাণবিক
ভরকে প্রকাশ করে। |
৩। সংকেত দ্বারা পদার্থের আণবিক
ভর প্রকাশ পায় । |
৪। প্রতীকে কেবলমাত্র একটি মৌলের
পরমাণু থাকে। |
৪। কী কী মৌলের কতটি পরমাণু নিয়ে
পদার্থের অণুটি গঠিত হয় তা সংকেত দ্বারা বোঝা যায় । |
যোজনীর ধারণা
আমরা জানি দুই বা ততোধিক পরমাণু একত্রে
যুক্ত হয়ে অণু গঠন করে। অণুতে পরমাণুগুলো রাসায়নিক আসক্তি দ্বারা সংযুক্ত থাকে। পরমাণুগুলোর
এ সংযুক্তি বিশৃঙ্খলভাবে ঘটে না বরং একটি নিয়ম দ্বারা পরিচালিত হয়। যখন দুই বা ততোধিক
মৌল যুক্ত হয়ে একটি যৌগ গঠন করে তখন দেখা যায় একটি মৌলের নির্দিষ্ট সংখ্যক পরমাণু
অপর মৌলের নির্দিষ্ট সংখ্যক পরমাণুর সাথে যুক্ত হয়ে যৌগটির অণু সৃষ্টি করেছে। যেমন,
হাইড্রোজেন ক্লোরাইডের সংকেত HCl, পানির সংকেত H2O, অ্যামোনিয়ার সংকেত NH3
এবং মিথেনের সংকেত CH4। এখন কথা হল এগুলোর সংকেত এমনটি হল কেন? এর উত্তরে দেখা যায় :
১। ক্লোরিনের ১টি পরমাণু হাইড্রোজেনের
১টি পরমাণুর সাথে যুক্ত হয়ে ১ অণু হাইড্রোজেন ক্লোরাইড উৎপন্ন করেছে ।
২। অক্সিজেনের ১টি পরমাণু হাইড্রোজেনের
২টি পরমাণুর সাথে যুক্ত হয়ে ১ অণু পানি উৎপন্ন করেছে।
৩। নাইট্রোজেনের ১টি পরমাণু হাইড্রোজেনের
৩টি পরমাণুর সাথে যুক্ত হয়ে ১ অণু অ্যামোনিয়া তৈরি করেছে।
৪। কার্বনের ১টি পরমাণু হাইড্রোজেনের
৪টি পরমাণুর সাথে যুক্ত হয়ে ১ অণু মিথেন তৈরি করেছে।
উপরের উদাহরণ থেকে দেখা যায় যে, ক্লোরিন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন এবং কার্বনের সাথে হাইড্রোজেনের যুক্ত হওয়ার সামর্থ্য বা ক্ষমতা এক নয়। কোনোটির বেশি আবার কোনোটির কম। এক পরমাণু ক্লোরিন এক পরমাণু হাইড্রোজেনের সাথে যুক্ত হয়। সুতরাং হাইড্রোজেন ও ক্লোরিনের যুক্ত হওয়ার ক্ষমতা উভয়ের সমান অর্থাৎ ১। পানির ক্ষেত্রে এক পরমাণু অক্সিজেন দুই পরমাণু হাইড্রোজেনের সাথে যুক্ত হয়। অর্থাৎ অক্সিজেনের যুক্ত হওয়ার ক্ষমতা হাইড্রোজেনের ২ গুণ। অনুরূপভাবে অ্যামোনিয়ার ক্ষেত্রে নাইট্রোজেনের যুক্ত হওয়ার ক্ষমতা হাইড্রোজেনের ৩ গুণ এবং মিথেনে কার্বনের যুক্ত হওয়ার ক্ষমতা হাইড্রোজেনের ৪ গুণ। একটি মৌলের অন্য মৌলের সাথে সংযুক্ত হওয়ার সামর্থকে যোজ্যতা বলে । কোনো মৌলের একটি পরমাণু যত সংখ্যক হাইড্রোজেনের পরমাণুর সাথে যুক্ত হয় অথবা যত সংখ্যক হাইড্রোজেন পরমাণুকে অপসারিত করে সেই সংখ্যা দ্বারা ঐ মৌলের যোজ্যতা প্রকাশ করা হয়। হাইড্রোজেন পরমাণুর যোজ্যতাকে একক বা ১ ধরে অন্যান্য মৌলের যোজ্যতা নিরূপণ করা হয় ।
উপরের উদাহরণগুলোতে হাইড্রোজেন ক্লোরাইডে ক্লোরিনের যোজ্যতা ১, পানিতে অক্সিজেনের যোজ্যতা ২, অ্যামোনিয়ায় নাইট্রোজেনের যোজ্যতা ৩ এবং মিথেনে কার্বনের যোজ্যতা ৪। কোনো মৌলের যোজ্যতার পরিমাণ হল ঐ মৌলের একটি পরমাণু কয়টি হাইড্রোজেন পরমাণুর সাথে যুক্ত হয় অথবা কয়টি হাইড্রোজেন পরমাণুকে কোনো যৌগ থেকে সরিয়ে দিতে পারে। মৌলের যোজ্যতা নির্ণয়ে হাইড্রোজেনের যোজ্যতাকে একক ধরা হয়। এর কারণ হল হাইড্রোজেনের যোজ্যতা সবচেয়ে কম। অর্থাৎ হাইড্রোজেনের একটি পরমাণু অন্য কোনো মৌলের একাধিক পরমাণুর সাথে যুক্ত হতে পারে না [শুধুমাত্র হাইড্রোজয়িক এসিড (N3H) ছাড়া] ।
যৌগের সংকেত লেখার সময় আমাদেরকে মৌলের যোজনী সংখ্যা সম্পর্কে ভাবতে হবে। মৌলের যোজনীর সংখ্যা অনুযায়ী মৌলগুলো একে অন্যের সাথে রাসায়নিকভাবে যুক্ত হয়ে যৌগ গঠন করে। মৌলিক পদার্থের যোজনীকে আমরা এক একটি হাত বা আংটার সাথে তুলনা করতে পারি। যে মৌলের একটি হাত তার যোজনী হবে এক । তাই এক হাত বিশিষ্ট মৌলের একটি পরমাণু অপর কোনো এক হাত বিশিষ্ট একটি পরমাণুর সাথে যুক্ত হবে। হাইড্রোজেন এবং ক্লোরিন- উভয়েই এক হাত বিশিষ্ট মৌল। অর্থাৎ উভয়ের যোজনী এক। তাই এদেরকে আমরা যথাক্রমে এভাবে লিখতে পারি HCl। হাইড্রোজেন ক্লোরাইডের সংকেত HCl। অক্সিজেনের যোজনী ২ অর্থাৎ অক্সিজেনের একটি পরমাণুর দুইটি হাত আছে। এ দুইটি হাত দিয়ে অক্সিজেন এক যোজী বা এক হাত বিশিষ্ট দুইটি হাইড্রোজেনের পরমাণুকে ধরতে পারে ।
পানি, অ্যামোনিয়া ও মিথেনের অণুকে
নিম্নরূপভাবে দেখানো যেতে পারে ।
কোনো যৌগ গঠনের সময় সাধারণভাবে লক্ষ রাখতে হবে যেন মৌলের সবগুলো হাত বা যোজনী কাজে লাগে ।
ছক: কয়েকটি
মৌল ও যৌগমূলকের যোজনী
|
যোজনী-
১ |
যোজনী
- ২ |
যোজনী-৩ |
যোজনী
- 8 |
অধাতু (মৌল) |
হাইড্রোজেন (H) ফ্লোরিন
(F) ক্লোরিন (Cl) ব্রোমিন (Br) আয়োডিন
(I) |
অক্সিজেন (O) সালফার (S) কার্বন (C) |
নাইট্রোজেন (N) ফসফরাস
(P) |
কার্বন (C) সালফার (S) |
ধাতু (মৌল) |
সোডিয়াম
(Na) পটাশিয়াম
(K) কপার (Cu) (আস) সিলভার
(Ag) গোল্ড (Au) (আস) |
ম্যাগনেসিয়াম (Mg) ক্যালসিয়াম
(Ca) আয়রন (Fe) (আস) কপার(Cu) (ইক) জিঙ্ক (Zn) টিন (Sn) লেড (Pb) |
অ্যালুমিনিয়াম (Al) আয়রন
(Fe) (ইক) গোল্ড (Au) (ইক) |
টিন (Sn) লেড (Pb) |
যৌগমূলক |
অ্যামোনিয়াম (NH4+ ) হাইড্রক্সিল (OH-) নাইট্রাইট (NO2-) নাইট্রেট (NO3-) হাইড্রোজেন কার্বনেট (HCO3-) |
কার্বনেট (CO32-) সালফাইট (SO32-) সালফেট (SO42-) |
ফসফেট (PO43-) |
|
উপরের ছক দেখে বল ক্যালসিয়ামের যোজনী কত? ক্যালসিয়ামের কয়টা হাত থাকবে? ক্লোরিন পরমাণুর যোজনী কত? ক্যালসিয়ামের যোজনী ২, অর্থাৎ ক্যালসিয়াম পরমাণুর ২টা হাত থাকবে। ক্লোরিন পরমাণু ১ যোজী। ক্যালসিয়াম ও ক্লোরিনের রাসায়নিক বিক্রিয়ায় গঠিত দ্রব্য ক্যালসিয়াম ক্লোরাইডের সংকেত কী হবে?
ক্যালসিয়াম ক্লোরাইডের সংকেত হবে
CaCl2
ক্যালসিয়াম ও অক্সিজেন উভয়ের যোজনী ২। তাহলে ক্যালসিয়াম অক্সাইডের সংকেতটি হবে Ca=O বা CaO, কার্বন ডাইঅক্সাইডের সংকেত CO2 । এ সংকেত থেকে কার্বন ও অক্সিজেনের রাসায়নিক বিক্রিয়াটি হাতের সাহায্যে দেখিয়ে তাদের যোজনী বের করতে পারবে কি? হ্যাঁ এটাকে এভাবে দেখানো যায়; O = C = O বা CO2 । এখানে কার্বনের যোজনী ৪ এবং অক্সিজেনের যোজনী ২।
অনেক সময় একাধিক পরমাণু মিলে একটি পরমাণু গুচ্ছ গঠন করে এবং ঐ পরমাণু গুচ্ছ একটি পরমাণুর মত আচরণ করে। তোমরা সালফিউরিক এসিড H2SO4, কপার সালফেট CuSO4, ক্যালসিয়াম কার্বনেট CaCO3 এবং নাইট্রিক এসিড HNO3 এর কথা শুনে থাকবে। এ সব পদার্থের SO42-, CO32-, NO3- ইত্যাদি পরমাণু গুচ্ছ স্বাধীনভাবে থাকে না। মৌলিক পদার্থের পরমাণুর ন্যায় যৌগ গঠনে অংশ নেয়। এ জাতীয় পরমাণু গুচ্ছকে যৌগমূলক বা র্যাডিকেল বলে।সালফেট SO42-, কার্বনেট CO32-, নাইট্রেট NO3‑ ইত্যাদি যৌগমূলকের উদাহরণ। সালফেট মূলকের যোজনী ২, কার্বনেট মূলকের যোজনী ২ এবং নাইট্রেট মূলকের যোজনী ১। অর্থাৎ সালফেট এবং কার্বনেট মূলকের দুইটি করে হাত এবং নাইট্রেট মূলকের ১টি হাত আছে ।
হাইড্রোজেন সালফেট বা সালফিউরিক এসিডের
সংকেত,
ক্যালসিয়াম কার্বনেট যৌগে ক্যালসিয়ামের যোজনী ২ এবং কার্বনেটের যোজনী ২। অতএব ক্যালসিয়াম কার্বনেটের সংকেত হবে Ca = CO3 বা CaCO3।
আয়রন (III) সালফেটে আয়রনের যোজনী ৩। তাহলে আয়রন (III) সালফেটের সংকেত কী হবে ? Fe = SO4 লিখলে আয়রনের একটি হাত খালি থেকে যায়। যৌগ গঠনের সময় কোনো হাত খালি থাকলে চলবে না। তাহলে কী হবে? আরও একটি সালফেট মূলক যোগ দিলে সংকেতটি হবে :
এক্ষেত্রে SO4 যৌগমূলকের একটি হাত ফাঁকা থেকে যায়। যদি আর একটি আয়রন (III) পরমাণু এতে যোগ করা হয় তাহলে এর সংকেত হবে
এখানেও আয়রন (III) পরমাণুর দুইটি হাত খালি থেকে যায়। তাহলে এবারে আরও একটি সালফেট মূলক যোগ করে তার সংকেত লেখা যায়-
এ অধ্যায়ে আমরা ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড
CaCl2, ক্যালসিয়াম অক্সাইড CaO, পানি
H2O, হাইড্রোক্লোরিক এসিড HCl, সালফিউরিক
এসিড H2SO4, নাইট্রিক এসিড HNO3, কপার সালফেট CuSO4, আয়রন(III) সালফেট
Fe2(SO4)3 ইত্যাদি যৌগগুলোর সংকেত লিখতে শিখেছি।
এ সংকেতগুলো তোমরা লক্ষ করলে দেখতে পাবে যে, প্রত্যেকটির দুটো অংশ আছে। H, Ca, Cu, Fe
ইত্যাদি ধনাত্মক অংশ এবং O, Cl, NO3, CO3, SO4 ইত্যাদি ঋনাত্মক অংশ বা মূলক। পরবর্তীতে
রসায়ন বিজ্ঞান পাঠের সময় এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবে। সাধারণত যৌগ গঠনের সময়
ধাতব অংশটি অপর একটি অধাতব অংশ বা অধাতুর ন্যায় ক্রিয়াশীল একটি যৌগমূলকের সাথে যুক্ত
হয়। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে অধাতব মৌলগুলো পরস্পর যুক্ত হয়েও যৌগ গঠন করে। যেমন,
H2O, HNO3 ইত্যাদি। উপরের ছকে অধাতু মৌল, ধাতু
মৌল এবং র্যাডিকেল বা যৌগমূলকের প্রতীক এবং যোজনী দেওয়া আছে । এ ছক থেকে তোমরা নতুন
নতুন যৌগ গঠন করতে চেষ্টা কর। তাহলে যোজনী সম্পর্কে তোমাদের ধারণা আরও স্পষ্ট হবে এবং
তোমরা আনন্দও পাবে। এক্ষেত্রে কয়েকটি যৌগের সংকেত লেখার চেষ্টা কর। যেমন- অ্যামোনিয়াম
নাইট্রেট, ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড, সিলভার সালফেট, অ্যামোনিয়াম সালফেট ও অ্যামোনিয়াম
ফসফেট।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন