DNA একপ্রকার নিউক্লিক অ্যাসিড। এটি সজীব বস্তুর একটি গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক উপাদান যা জীবের বংশগত বৈশিষ্ট্য এক জনু থেকে অপর জনুতে এবং এক কোষ থেকে অন্য কোষে বহন করে। DNA সজীব বস্তুর যাবতীয় জৈবিক ক্রিয়াকলাপগুলো নিয়ন্ত্রণ করে; এক কথায় DNA হলো জীবের বংশগত বৈশিষ্ট্যের প্রকৃত ধারক ও বাহক। DNA প্রধানত ক্রোমোসোমেই থাকে, তবে মাইটোকন্ড্রিয়া, প্লাস্টিড, সেন্ট্রোসোম প্রভৃতি কোষীয় অঙ্গাণুর মধ্যে এমনকি সাইটোপ্লাজমের মধ্যে কিছু পরিমাণ DNA পাওয়া যায়।
DNA-এর সংজ্ঞা: সজীব কোষে অবস্থিত স্বপ্রজননশীল, পরিব্যক্তিক্ষম, সকল প্রকার জৈবিক কার্যের নিয়ন্ত্রক এবং বংশগত বৈশিষ্ট্যের ধারক ও বাহক যে নিউক্লিক অ্যাসিড তাকে DNA বলে ।
ওয়াটস ও ক্রিক |
DNA এর ভৌত গঠন (Physical structure of DNA):
DNA এর ভৌত গঠন সম্পর্কে ওয়াটসন
ও ক্রিক ১৯৫৩ সালে একটি মডেল প্রদান করেন। এটি হলো DNA ডাবল হেলিক্স মডেল এবং এ মডেল
প্রস্তাবের জন্য তাঁরা ১৯৬৩ সালে আরেক বিজ্ঞানী, উইলকিন্স-সহ নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।
ওয়াটসন ও ক্রিক প্রদত্ত DNA অণুর গঠনশৈলী:
১৯৫৩ সালে বিজ্ঞানী ওয়াটসন ও
ক্রিক DNA অণুর প্রতিকৃতির যে নক্সা (model) প্রণয়ন করেন, তার বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ।
DNA-র রাসায়নিক
গঠন (Chemical structure of DNA)
DNA এক ধরনের রাসায়নিক জৈব যৌগ। এটি নিম্নলিখিত রাসায়নিক উপাদান সমন্বয়ে গঠিত-
ডিএনএ এর রাসায়নিক গঠন |
i. একটি পেন্টোজ শর্করা
(Pentose sugar) হিসেবে ডি-অক্সিরাইবোজ (deoxyribose)।
ii. একটি ফসফোরিক অ্যাসিড
(Phosphoric acid) তথা ফসফেট গ্রুপ। এবং
iii. নাইট্রোজেন বেস
(Nitrogen base) : DNA অণুতে দু'রকম নাইট্রোজেন বেস থাকে, যথা- পাইরিমিডিন এবং পিউরিন
(a) পাইরিমিডিন—এটি একটি 'রিং নিয়ে গঠিত।
DNA অণুতে সাইটোসিন এবং থাইমিন নামক দু'প্রকারের পাইরিমিডিন থাকে।
(b) পিউরিন-এটি দু'টি রিং নিয়ে
গঠিত। DNA অণুতে অ্যাডেনিন ও গুয়ানিন নামক দু'প্রকার পিউরিন থাকে।
পিউরিন ও পাইরিমিডিন বেস ডি-অক্সিরাইবোজের
সঙ্গে রাসায়নিক লিংকেজ গঠন করে থাকে, যাকে নিউক্লিওসাইড বলে। নিউক্লিওসাইড ফসফোরিক
অ্যাসিডের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নিউক্লিওটাইড গঠন করে। নিউক্লিওটাইড হলো DNA অণুর মূল কাঠামো।
DNA অণুকে রাসায়নিক গুণগতভাবে নিউক্লিওটাইডের পলিমার বা পলিনিউক্লিওটাইড বলে।
DNA-র ভৌত গঠন
(Physical structure of DNA)
১। দুটি বিপরীতমুখী পলিনিউক্লিওটাইড
সূত্র পরস্পরের সাথে লোহার সিঁড়ির মতো ডানদিকে প্যাচানো আকৃতি ধারণ করে এবং একটি জোড়
কুণ্ডলী বা ডাবল হেলিক্স (double helix) গঠন করে। এ সিঁড়ির দুদিকের হাতল নির্মিত হয়
ডি-অক্সিরাইবোজ সুগার (S) ও ফসফেট (P) এর পর্যায়ক্রমিক সংযুক্তির মাধ্যমে এবং ধাপগুলো
দুটি নাইট্রোজেন বেস (A = T, C = G) দিয়ে গঠিত।
ডিএনএ এর ভৌত গঠন |
৩। সিঁড়ির মতো প্যাচানো সূত্রদুটি
একটি কাল্পনিক মধ্য অক্ষকে ঘিরে থাকে। সূত্রদুটি পরস্পরের সমান্তরালে কিন্তু বিপরীতমুখী
হয়ে অবস্থান করে। অর্থাৎ একটি সূত্র ৫′→৩′ মুখী এবং অন্যটি ৩′→৫′ কার্বনমুখী অবস্থানে থাকে।
৪। বেসগুলো হাইড্রোজেন বন্ড দিয়ে
যুক্ত হয়। কাজেই সিঁড়ির বাইরের দিকে থাকে ফসফেট এবং ভেতরের দিকে থাকে নাইট্রোজেন
বেস। একটি সূত্রের গুয়ানিন অপর সূত্রের সাইটোসিনের সাথে তিনটি হাইড্রোজেন বন্ড দিয়ে
যুক্ত হয় (G≡C) এবং একটি সূত্রের অ্যাডেনিন
অপর সূত্রের থাইমিনের সাথে দুটি হাইড্রোজেন বড্ড দিয়ে সংযুক্ত থাকে (A=T)।
৫। হেলিক্সের ব্যাস ২০Å। দৈর্ঘ্য বিভিন্ন হতে পারে।
৬। একটি পূর্ণাঙ্গ প্যাচ প্রতি
৩৪Å দূরত্বে সম্পন্ন হয়। প্যাচটি
হয় ডান থেকে বাঁদিকে। দশ নিউক্লিওটাইড জোড়ের পর একেকটি প্যাঁচ সম্পন্ন হয়। প্রতি
প্যাঁচে থাকে প্রায় ২৫টি হাইড্রোজেন বন্ড ।
৭। বেস জোড়গুলো পরস্পর থেকে ৩.৪Å (৩৪Å ÷১০=৩.৪Å) দূরত্বে অবস্থিত।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন