জৈব অণু অধ্যায়ের মূলকথা
পাঠ সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাবলি
১ । জৈব অণু (Biomolecule): সজীব কোষ অসংখ্য
অণু দিয়ে গঠিত। এই অণুগুলোর মধ্যে রয়েছে ক্ষুদ্র অণু এবং বৃহৎ অণু যেগুলো জীবদেহ গঠনে
প্রত্যক্ষভাবে জড়িত, এদেরকে একত্রে জৈব অণু বলে।
২। কার্বোহাইড্রেট
(Carbohydrate) : কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা হলো এক ধরনের জৈব
রাসায়নিক পদার্থ যার প্রতিটি অণুতে কার্বনের সাথে অক্সিজেন ও হাইড্রোজেন থাকে, যেখানে
হাইড্রোজেন পরমাণুর সাথে অক্সিজেন পরমাণুর অনুপাত ২:১।
৩। কার্বন (Carbon): পৃথিবীতে জীবনের
ভিত্তি হলো কার্বন। এটি একটি মৌলিক পদার্থ। সব মৌলের চেয়ে কার্বনের গলনাঙ্ক সর্বোচ্চ।
এর প্রতীক হলো C এবং পারমাণবিক সংখ্যা 6, ইলেকট্রন বিন্যাস 2, 4.
৪। হাইড্রোজেন (Hydrogen): হাইড্রোজেন সবচেয়ে
হালকা মৌলিক পদার্থ। এটি পর্যায় সারণির প্রথম রাসায়নিক মৌল। এর পারমাণবিক সংখ্যা 1 ও প্রতীক H। এটি মহাবিশ্বের সৃষ্টির সময়
তৈরি হওয়া প্রথম মৌল। আদর্শ তাপমাত্রা ও চাপে হাইড্রোজেন বর্ণহীন, গন্ধহীন, স্বাদহীন,
অধাতব এবং খুবই দাহ্য দ্বিপরমাণুক গ্যাস। এর সংকেত H₂।
৫। নাইট্রোজেন (Nitrogen): নাইট্রোজেন একটি
মৌল বা মৌলিক পদার্থ। এই মৌলিক পদার্থের প্রতীক N ও পারমাণবিক সংখ্যা 7। বিশুদ্ধ নাইট্রোজেন
স্বাভাবিক অবস্থায় বর্ণহীন, গন্ধহীন ও স্বাদহীন। এটি একটি নিষ্ক্রিয় ধরনের দ্বিপরমাণুক
গ্যাস।
৬। অক্সিজেন (Oxygen): অক্সিজেন একটি রাসায়নিক
মৌল। এর প্রতীক O ও পারমাণবিক সংখ্যা
৪ এবং নিউট্রন সংখ্যা ৪। এটি বর্ণহীন এবং গন্ধহীন অণু যা স্বাভাবিক তাপমাত্রায় গ্যাসীয়।
৭। ফসফরাস (Phosphorus): ফসফরাস একটি মৌল।
এর প্রতীক P, এবং পারমাণবিক সংখ্যা 15। ফসফরাস শরীরের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান।
এটি শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করে কিডনিকে স্বাস্থ্যকর রাখে।
৮। সালফার (Sulfur): সালফার প্রাচীনকাল
থেকে পরিচিত একটি মৌলিক পদার্থ। বৈশিষ্ট্যপূর্ণ হলুদ রঙের কারণে একে সহজেই চেনা যায়।
অজৈব ও জৈব উভয় রসায়নে এর গুরুত্ব অপরিসীম। সালফারের প্রতীক S এবং পারমাণবিক সংখ্যা
16.
৯ । প্রোটিন (Protein): প্রোটিন জীবদেহের
একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ জৈব রাসায়নিক পদার্থ ও বৃহদাকার যৌগিক জৈব অণু। আণবিক জীববিজ্ঞানের
দৃষ্টিকোণ থেকে প্রোটিন হলো পেপটাইড বন্ধনসমূহ দ্বারা পরস্পর সংযুক্ত অ্যামিনো অ্যাসিডের
পলিমার শৃঙ্খল।
১০ । অ্যামিনো অ্যাসিড (Amino
Acid): প্রোটিনের প্রধান গাঠনিক উপাদান হচ্ছে অ্যামিনো অ্যাসিড। জীবদেহে সর্বমোট
20টির অধিক অ্যামিনো অ্যাসিড রয়েছে এবং এদেরকে মোটামুটি 3টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা-
অ্যালিফ্যাটিক অ্যামিনো অ্যাসিড, অ্যারোমেটিক অ্যামিনো অ্যাসিড ও হিটারোসাইক্লিক অ্যামিনো
অ্যাসিড।
১১। লিপিড (Lipid): লিপিড উদ্ভিদ ও
প্রাণী দেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ জৈব রাসায়নিক পদার্থ। এটি কার্বন, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন
সমন্বয়ে গঠিত। লিপিড কোষের গঠন, শক্তি সংরক্ষণ, তাপ নিয়ন্ত্রণ এবং আন্তঃকোষীয় যোগাযোগ
রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
১২। নিউক্লিয়িক অ্যাসিড
(Nucleic Acid): নিউক্লিয়াসের ক্রোমোজোম ও রাইবোজোমে যে জৈব
অণু থাকে তাকে নিউক্লিয়িক অ্যাসিড বলে। নিউক্লিয়িক অ্যাসিড পেন্টোজ স্যুগার, নাইট্রোজেন
বেস বা ক্ষারক এবং ফসফোরিক অ্যাসিড দিয়ে গঠিত এক ধরনের জৈব অণু যা জীবের বংশগতির ধারাসহ
সব কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে।
১৩। ক্রোমোজোম (Chromosome): ক্রোমোজোম হচ্ছে
নিউক্লিক অ্যাসিড (DNA, RNA) ও প্রোটিন দ্বারা গঠিত কোষের একটি জটিল অঙ্গ। যার মধ্যে
জীবের সকল বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান থাকে। ক্রোমোজোমকে বংশগতির বৈশিষ্ট্যের ধারক ও বাহক বলা
হয়।
১৪। গ্লাইকোলাইসিস
(Glycolysis): সাইটোপ্লাজমে সংঘটিত শ্বসনের যে প্রক্রিয়ায়
এক অণু গ্লুকোজ বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে জারিত হয়ে দুই অণু পাইরুভিক অ্যাসিড
উৎপন্ন হয় তাই গ্লাইকোলাইসিস।
১৫। সালোকসংশ্লেষণ
(Photosynthesis): সালোকসংশ্লেষণ হলো একটি জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে
উদ্ভিদ কার্বন ডাইঅক্সাইড, পানি ও সূর্যের আলোর সাহায্যে খাদ্য তৈরি করে।
১৬ । শ্বসন (Respiration): যে জৈব রাসায়নিক
প্রক্রিয়ায় জীবকোষস্থ জটিল জৈব যৌগ (খাদ্যবস্তু) জারিত হয়। ফলে জৈব যৌগে সঞ্চিত স্থিতিশক্তি
রূপান্তরিত হয়ে গতিশক্তি বা রাসায়নিক শক্তিতে পরিণত হয়, তাকে শ্বসন বলে।
১৭ । গ্লাইকোসাইলেশন
(Glycosylation): গ্লাইকোসাইলেশন হলো একটি এনজাইমেটিক বিক্রিয়ার
মাধ্যমে প্রোটিনের মেরুদণ্ডে কার্বোহাইড্রেটের সংযুক্তি। গ্লাইকোসাইলেশন প্রোটিনগুলোর
ভাঁজ এবং স্থায়িত্বকে প্রভাবিত করে এবং তাদের জৈবিক কার্যকলাপকে প্রভাবিত করে।
১৮। লিপিড বাইলেয়ার (Lipid
Bilayer): লিপিড বাইলেয়ার হলো কোষের ঝিল্লির ভিত্তি। এর দুটি লেয়ার ফসফোলিপিড
দ্বারা গঠিত, প্রতিটি লেয়ারের ফ্যাটি অ্যাসিড লেজগুলো কোষের বাইরের দিকে এবং পোলার
মাথাগুলো কোষের ভিতরের দিকে নির্দেশ করে।