সোমবার, ২৪ জুলাই, ২০২৩

উদ্ভিদের প্রজনন অধ্যায়ের ক্লাস লেকচার

প্রজনন: যে জটিল প্রক্রিয়ায় কোনো জীব তার অনুরূপ প্রতিকৃতি বা বংশধর সৃষ্টি করে তাকে প্রজনন বলে।

 

প্রজনন দুই প্রকার।

যথা-   ১. যৌন প্রজনন

২. অযৌন প্রজনন

 

১. যৌন প্রজনন: যে প্রজনন প্রক্রিয়া দুইটি ভিন্নধর্মী গ্যামেটের (পুং ও স্ত্রী) উৎপত্তি ও নিষেকের মাধ্যমে সম্পন্ন হয় তাকে যৌন প্রজনন বলে।

 

২. অযৌন প্রজনন: যে প্রজনন প্রক্রিয়া কোনো ধরণের গ্যামেটের উৎপত্তি বা নিষেক ছাড়াই সম্পন্ন হয় তাকে অযৌন প্রজনন বলে।

 

অযৌন প্রজনন দুই প্রকার:

১. স্পোর উৎপাদন

২. অঙ্গজ প্রজনন

 

স্পোর: বিভিন্ন অপুষ্পক উদ্ভিদ, ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া এবং প্রোটোজোয়া কর্তৃক সৃষ্ট, সাধারণত এক কোষী আনুবীক্ষনিক অযৌন জনন অঙ্গ যা অন্য কোনো জনন কোষের সাথে মিলিত না হয়েই নতুন বংশধর সৃষ্টি করতে সক্ষম, তাকে স্পোর বলে।

 

অঙ্গজ প্রজনন: কোনো ধরণের অযৌন রেণু বা জনন কোষ সৃষ্টি না করে দেহের অংশ খন্ডিত হয়ে বা কোনা প্রত্যঙ্গ রূপান্তরিত হয়ে যে প্রজনন ঘটে তাকে অঙ্গজ প্রজনন বলে।

 

অঙ্গজ প্রজনন দুই প্রকার:

১. প্রাকৃতিক অঙ্গজ প্রজনন: যে প্রজনন প্রক্রিয়া মানুষের কোনো রকম হস্তক্ষেপ ছাড়াই স্বাভাবিক ও স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে সম্পন্ন হয় তাকে প্রাকৃতিক অঙ্গজ প্রজনন বলে।

 

২. কৃত্রিম অঙ্গজ প্রজনন:  মানুষ তার সুবিধার জন্য কৃত্রিম উপায়ে জীবের যে অঙ্গজ প্রজনন ঘটায় তাকে কৃত্রিম অঙ্গজ প্রজনন বলে।

কৃত্রিম অঙ্গজ প্রজনন দুই প্রকার।

যথা-   ১.  কলম

২. কাটিং

 

প্রাকৃতিক অঙ্গজ প্রজনন চার প্রকার:

১. দেহের খন্ডায়ন: উদ্ভিদের দেহ কোনো কারণে খণ্ডিত হলে, প্রতিটি খন্ড একটি স্বাধীন উদ্ভিদ হিসেবে জীবন যাপন শুরু করলে তাকে দেহের খন্ডায়নের মাধ্যমে প্রজনন বলে। উদাহরণ: Nostoc, Spirogyra 

২. মূলের মাধ্যমে: কোনো উদ্ভিদের নতুন বংশধর মূল হতে সৃষ্টি হলে তাকে মূলের মাধ্যমে প্রজনন বলে। উদাহরণ: সেগুন, পটল, মিষ্টি আলু।

 

৩. রূপান্তরিত কান্ডর মাধ্যমে: খাদ্য সঞ্চয়, প্রতিরক্ষা, ভারসাম্যরক্ষা প্রভৃতি কারণে উদ্ভিদের কান্ড রূপান্তরিত হলে এবং তা থেকে নতুন বংশধর সৃষ্টি হলে তাকে রূপান্তরিত কান্ডের মাধ্যমে প্রজনন বলে।

 

৪. পাতার মাধ্যমে: কোনো কোনো উদ্ভিদের পাতা হতে নতুন বংশধর সৃষ্টি হয়। একে পাতার মাধ্যমে প্রজনন বলে। উদাহরণ: পাথর কুচি।

 

বিভিন্ন প্রকার রূপান্তরিত কান্ডের মাধ্যমে প্রজনন নিম্নে দেয়া হল:

 

১. টিউবার: উদাহরণ: আলু                            

২. রাইজোম: উদাহরণ: আদা

৩. কন্দ: উদাহরণ: পিঁয়াজ, রসুন                  

. স্টোলন: উদাহরণ: কচু, পুদিনা

৫. অফসেট: উদাহরণ: কচু, পুদিনা                

৬. পর্ণকান্ড: উদাহরণ: ফণিমনসা

৭. বুলবিল: উদাহরণ: চুপড়ি আলু

 

ফুল: উদ্ভিদের প্রজননের জন্য বিশেষায়িত রূপান্তরিত বিটপকে ফুল বলে।

 

একটি আদর্শ ফুলের পাঁচটি অংশ:

১. পুষ্পাক্ষ: ফুলের সবথেকে নিচের চওড়া স্তবক যার উপর ফুলের অন্যান্য স্তবক গুলো অবস্থান  করে তাকে পুষ্পাক্ষ বলে।

 

কাজ:

১. ফুলের অন্যান্য স্তবক গুলোকে ধারণ করা।

২. কান্ড বা বৃন্তের সাথে ফুলকে যুক্ত করা।

 

২. বৃতি: পুষ্পের সবচাইতে বাইরের বা নিচের দিকে অবস্থিত সবুজ এবং পাতার ন্যায় দেখতে স্তবকটিকে বৃতি বলে। বৃতির প্রতিটি অংশকে বৃত্যাংশ বলে। বৃত্যাংশগুলো যুক্ত থাকলে যুক্ত বৃতি আর যুক্ত না থাকলে বিযুক্ত বৃতি ফুল বলে।

 

কাজ:

১. মুকুল অবস্থায় পুষ্পের ভেতরের অংশগুলোকে বাইরের তাপ, শৈত বা বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা করে।

২. সবুজ বৃতি সালোক সংশ্লেষণে অংশগ্রহণ করে।

 

৩. দলমন্ডল: বৃতির ভেতরের দিকে অবস্থিত পুষ্পের দ্বিতীয় স্তবকটিকে দলমন্ডল বলে। দলমন্ডলের প্রতিটি অংশকে পাঁপড়ি বা দলাংশ বলে। প্রতিটি পাঁপড়ির উপরের দিকে চওড়া ও নিচের দিকে সরু হয়ে থাকে।

 

কাজ:

১. পুষ্পের অভ্যান্তরস্থ অঙ্গ গুলোকে রক্ষা করা।

২. গন্ধ ও রঙের সাহায্যে পতঙ্গকে আকৃষ্ট করে পরাগায়নে সাহায্য করা।

 

৪. পুং স্তবক: দলমন্ডলের ভেতরের দিকে অবস্থিত উপরের থলির ন্যায় অংশ ধারণকারী ফুলের চতুর্থ স্তবক কে পুং স্তবক বলে। পুংস্তবকের প্রতিটি অংশকে পুংকেশর বলে। প্রতিটি পুংকেশরের দুটি অংশ আেেছ, যথা-১. সরু সুতার ন্যায় দন্ড বা পুং দন্ড বা পরাগ দন্ড এবং ২.  দন্ডের মাথায় থলির ন্যায় পরাগধানী।

 

কাজ:

১. পরাগ রেণু তথা পুং জনন কোষ তৈরী করা।

২. পরাগ রেণুকে ছড়িয়ে দেয়া।

 

৫. স্ত্রী স্তবক: ফুলের পুং স্তবকের ভেতরের দিকে অবস্থিত পঞ্চম ও শেষ স্তবককে স্ত্রী স্তবক বলে। স্ত্রী স্তবকের প্রতিটি অংশকে গর্ভপত্র বলে। প্রতিটি গর্ভপত্র তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত, যথা- ১. নিচের সামান্য স্ফীত অংশ ডিম্বাশয় বা গর্ভাশয় ২. গর্ভাশয়ের উপরের সরু সুতার ন্যায় গর্ভদন্ড এবং ৩. গর্ভ দন্ডের উপরের অংশ গর্ভ মুন্ড।

 

কাজ:

১. ডিম্বানু তথা স্ত্রী জনন কোষ সৃষ্টি করা।

২. গর্ভাশয় ফলে পরিণত হয়।

          ফুলের স্তবক গুলোর মধ্যে পুং ও স্ত্রী স্তবক কে অত্যাবশ্যকীয় স্তবক এবং অন্যান্য স্তবক গুলোকে সাহায্যকারী স্তবক বলে।

        যদি কোনো ফুলের সবগুলো স্তবক থাকে তাকে তবে তাকে সম্পূর্ণ ফুল বলে। আর যে কোনো একটি স্তবক অনুপস্থিত থাকলে তাকে অসম্পূর্ণ ফুল বলে।

         ফুলে যদি শুধু পুংস্তবক থাকে তকে তাকে পুরুষ ফুল বলে। আর যদি শুধু স্ত্রী স্তবক থাকে তবে তাকে স্ত্রী ফুল বলে। আর উভয় থাকলে তাকে উভলিঙ্গ ফুল বলে। সুতরাং সকল সম্পূর্ণ ফুলই উভলিঙ্গ ফুল।

 

পুষ্পমঞ্জরী: গাছের কোনো শীর্ষ মুকুল বা কাক্ষিক মুকুল হতে উৎপন্ন শাখার চতুর্দিকে ফুলগুলো একটি বিশেষ নিয়মে সাজানো থাকে। ফুল সহ পুরো শাখাটিকে পুষ্পমঞ্জরী বলে। পুষ্প মঞ্জরির বৃদ্ধি অসীম হলে তাকে অনিয়ত আর সসীম হলে তাকে নিয়ত পুষ্পমঞ্জরী বলে।

 

পরাগায়ন: পরাগধানী থেকে পরাগরেণুর স্ত্রী স্তবকের গর্ভমুন্ডে পতিত হবার প্রক্রিয়াকে পরাগায়ন বলে।

পরাগায়ন দুই প্রকার:

যথা:    ১. স্ব- পরাগায়ন       

২. পর- পরাগায়ন

 

পরাগায়নের মাধ্যম: যে বাহক পরাগরেণু বহন করে গর্ভমুন্ড পর্যন্ত নিয়ে যায় তাকে পরাগায়নের মাধ্যম বলে।

 

পরাগায়নের মাধ্যম অনুসারে ফুল চার প্রকার:

                        যথা-   ১. পতঙ্গপরাগী ফুল   ২. বায়ু পরাগী ফুল

                                    ৩. পানি পরাগী ফুল ৪. প্রাণী পরাগী ফুল।

 

নিষিক্তকরণ:  একটি পুং গ্যামেট ও একটি স্ত্রী গ্যামেটের পরিপূর্ণ ভাবে মিলিত হবার প্রক্রিয়াকে নিষিক্তকরণ বলে।

 

ফল: নিষিক্তকরণের পর ফুলের গর্ভাশয় এককভাবে অথবা ফুলের অন্যান্য অংশসহ পরিপুষ্ট হয়ে যে অঙ্গ গঠন করে তাকে ফল বলে।

 

অঙ্কুরোদগম: বীজ থেকে শিশু উদ্ভিদ জন্মানো প্রক্রিয়াকে অঙ্করোদগম বলে।

 অঙ্কুরোদগমকে প্রধাণত দুই ভাগে ভাগ করা যায়: মৃদগত অঙ্কুরোদগম ও মৃদভেদী অঙ্কুরোদম।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবম শ্রেণি: বিজ্ঞান বই: নবম অধ্যায়: জৈব অণু অধ্যায়ের নোট (পর্ব:০১)

জৈব অণু অধ্যায়ের মূলকথা সজীব কোষ অসংখ্য অণু দিয়ে গঠিত। এই অণুগুলোর মধ্যে রয়েছে ক্ষুদ্র অণু এবং বৃহৎ অণু যেগুলো একত্রে জৈব অণু বলে পরিচিত। ...