সোমবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

খাদ্য ও পুষ্টি

 খাদ্য:

আমরা যে সব বস্তু আহার করি তাকে আহার্য সামগ্রী বলে। কিন্তু সব আহার্য সামগ্রীই খাদ্য নয়। সেই সব আহার্য সামগ্রীকেই খাদ্য বলা যাবে, যা দেহের পুষ্টি ও বৃদ্ধি সহায়ক এবং তাপশক্তি উৎপাদনে সহায়তা করে।

জীবদেহে শক্তির উৎস হল খাদ্য। সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়াকালে সৌরশক্তি খাদ্যের মধ্যে স্থৈতিক শক্তিরুপে আবদ্ধ হয়। জীবকোষে শ্বসনের সময় স্থৈতিক শক্তি তাপ শক্তি বা গতিশক্তি রুপে মুক্ত হয়, জীবদেহের যাবতীয় বিপাক ক্রিয়া, যেমন: শ্বসন, রেচন,পুষ্টি গ্রহণ ইত্যাদি এবং শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়াকলাপ, যেমন-বৃদ্ধি, চলন-গমন, জনন ইত্যাদি নিয়ন্ত্রিত হয়। সুতরাং প্রাণ ধারনের জন্য প্রত্যেক জীবকেই খাদ্য গ্রহণ করতে হয়। তাই যদি প্রশ্ন আসে খাদ্য কাকে বলে? তার সংজ্ঞায় আমরা বলতে পারি-

“যে সব আহার্য সামগ্রী গ্রহণ করলে জীবদেহের বৃদ্ধি সাধন, পুষ্টি ও শক্তি উৎপাদন এবং ক্ষয়পূরন হয়, তাকেই খাদ্য বলে।”

পুষ্টি:

যে শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় জীব তার দেহের ক্ষয়পূরণ ও বৃদ্ধি সাধন লাভের উদ্দেশ্যে পরিবেশ থেকে বিভিন্ন ধরনের খাদ্য উপাদান গ্রহণ করে এবং তা পরিপাক, পরিশোষণ, পরিবহন, আত্তীকরণ ও শক্তিউৎপাদন করে থাকে তাকে পুষ্টি বলে।

পুষ্টিমান বা পুষ্টিমূল্য:

কোন খাদ্যে কী পরিমাণ ও কত রকম খাদ্য উপাদান থাকে তাকে ঐ খাদ্যের পুষ্টিমান বা পুষ্টিমূল্য বলে।

বিশুদ্ধ খাদ্য:

যে খাদ্যে শুধু একটি খাদ্য উপাদান থাকে, তাকে বিশুদ্ধ খাদ্য বলে। যেমন : চিনি, গ্লুকোজ। এতে শর্করা ছাড়া আর কোনো উপাদান থাকে না, তাই একে বিশুদ্ধ খাদ্য বলে।

মিশ্র খাদ্য:

যে খাদ্যে একের অধিক পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান থাকে। যেমন : দুধ, ডিম, খিচুরি, পেয়ারা ইত্যাদি।

খাদ্য উপাদান: 

উপাদান অনুযায়ী খাদ্যবস্তুকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা: ১. আমিষ, ২. শর্করা ও ৩. স্নেহ।

শর্করা:

শর্করা শক্তি উৎপাদনকারী খাদ্য। এটি কার্বন, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন এই তিনটি মৌলিক উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত। শর্করা তিন প্রকার।

যথা:    ১. এক শর্করা বা মনোস্যাকরাইড,

২. দ্বি শর্করা বা ডাইস্যাকারাইড এবং

৩. বহু শর্করা বা পলি স্যাকারাইড 

শর্করা পরিপাকের পর সরল শর্করা তথা গ্লুকোজে পরিণত হয়। 

আমিষ বা প্রোটিন:

আমিষ হলো অ্যামাইনো এসিডের একটি জটিল যৌগ। এটি কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন ও সালফারের সমন্বয়ে গঠিত।

অ্যামাইনো এসিড: অ্যামাইনো এসিড দেহের বৃদ্ধি, ক্ষয়পূরণ ও নাইট্রোজেনের সমতা রক্ষা করে। জীবদেহে প্রায় ২২টি অ্যামাইনো এসিড পাওয়া যায়।

সহজপাচ্যতার গুণক: আমিষ জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করার পর এর শতকরা যত ভাগ অন্ত্র থেকে দেহে শোষিত হয় তত ভাগকে সেই আমিষের সহজপাচ্যতার গুণক ধরা হয়।

আমিষ পরিপাকের পর অ্যামাইনো এসিডে পরিণত হয়

স্নেহ পদার্থ:  স্নেহ পদার্থ ফ্যাটি এসিড ও গ্লিসারলের সমন্বয়ে গঠিত হয়। স্নেহ পদার্থে ২০ প্রকার চর্বি জাতীয় এসিড পাওয়া যায়। চর্বি জাতীয় এসিড দুই প্রকার।

যথা:    ১. অসম্পৃক্ত চর্বি জাতীয় এসিড এবং

২. সম্পৃক্ত চর্বি জাতীয় এসিড।

পরিপাকের পর স্নেহ পদার্থ ফ্যাটি এসিড ও গ্লিসারলে পরিণত হয়।

মৌলবিপাক:

বিপাক ক্রিয়া চালানোর জন্য যে শক্তি প্রয়োজন তাকে মৌলবিপাক বলে। 

খাদ্যপ্রাণ বা ভিটামিন:

যেসব জৈব রাসায়নিক পদার্থ খাদ্যে সামান্য পরিমাণে উপস্থিত থেকে বিভিন্ন জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়ায় পরোক্ষভাবে সাহায্য করে তাদের ভিটামিন বলে।

খনিজ লবণ: দেহকোষ ও দেহ তরলের জন্য খনিজ লবণ একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান। প্রধানত দুই ভাবে খনিজ লবণ দেহে কাজ করে।

যথা:    ১. দেহের গাঠনিক উপাদানরূপে ও

২. দেহের অভ্যন্তরীণ কাজ নিয়ন্ত্রণে।

পানি:

প্রাণীদেহের ৬০ থেকে ৭০ ভাগই পানি। তাই দেহ গঠনে পানির প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।

শুষ্কতা:

কোনো কারণে দেহে পানির পরিমাণ কমে গেলে কোষগুলোতে পানির স্বল্পতা দেখা দেয়। একে বলে শুষ্কতা।

রাফেজ বা আঁশযুক্ত খাদ্য:

শস্যদানা, ফলমূল, সবজির অপাচ্য অংশকে রাফেজ বলে। এটি কোনো পুষ্টি উপাদান নয়। তবে দেহের বর্জ্য পদার্থ নিস্কাশনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবম শ্রেণি: বিজ্ঞান বই: নবম অধ্যায়: জৈব অণু অধ্যায়ের নোট (পর্ব:০১)

জৈব অণু অধ্যায়ের মূলকথা সজীব কোষ অসংখ্য অণু দিয়ে গঠিত। এই অণুগুলোর মধ্যে রয়েছে ক্ষুদ্র অণু এবং বৃহৎ অণু যেগুলো একত্রে জৈব অণু বলে পরিচিত। ...