এই ক্লাস লেকচারটি মাধ্যমিক শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখে রচনা করা হয়েছে। তবে আগ্রহী এবং জানতে ইচ্ছুক সকলেরই উপকার হবে বলে আশা রাখি। লেখাটি ভালো লাগতে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।
কোষ: জীবদেহের গাঠনিক ও কার্যকরী একক যা অন্য কোনো
সজীব মাধ্যম ব্যাতিরেখেই নিজেই নিজের প্রতিরূপ তৈরী করতে পারে
তাকে কোষ বলে।
কোষ বিভাজন: একটি মাতৃকোষ হতে একাধিক অপত্য (অপত্য=সন্তান) কোষ তৈরী হবার প্রক্রিয়াকে কোষ বিভাজন বলে।
কোষ বিভাজন তিন প্রকার:
যথা- ক) অ্যামাইটোসিস
খ) মাইটোসিস এবং
গ) মিয়োসিস
ক. অ্যামাইটোসিস: যে কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ায় একটি মাতৃকোষের নিউক্লিয়াস এবং সাইটোপ্লাজম কোনো জটিল অন্তবর্তী পর্যায় ছাড়াই সরাসরি বিভক্ত হয়ে দুটি অপত্য কোষে পরিণত হয় তাকে অ্যামাইটোসিস কোষ বিভাজন বলে।
![]() |
চিত্র: অ্যামাইটোসিস |
বৈশিষ্ট্য:
১. কোষটি গোল আকার ধারণ করে।
২. নিউক্লিয়াসটি লম্বা হয়ে ডাম্বেল আকার ধারণ করে এবং মাঝ বরাবর সংকুচিত হয়ে যায়।
৩. একই সাথে কোষ পর্দাটি চারিদিক থেকে ভাঁজ হয়ে ভেতরে প্রবেশ করে।
৪. নিউক্লিয়াসটি মাঝখান হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে দুটি অপত্য নিউক্লিয়াসে পরিণত হয়।
৫. একই সাথে কোষ পর্দাটি চক্রাকারে বিপরীত প্রান্ত থেকে ভেতরের দিকে মিলিত হয়ে
দুটি অপত্য কোষ উৎপন্ন করে।
এ ধরণের কোষ বিভাজন নিম্ন শ্রেণীর এক কোষী জীবের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য হয়ে থাকে।
খ. মাইটোসিস: যে জটিল কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ায় একটি মাতৃ কোষের নিউক্লিয়াস প্রথমে এবং সাইটোপ্লাজম
পরে একবার করে বিভাজিত হয়ে দুটি অপত্য কোষের সৃষ্টিকরে যেখানে প্রতিটি নতুন সৃষ্ট কোষের
ক্রোমোজোম সংখ্যা,
গঠন ও গুণাগুণ হুবহু মাতৃকোষের অনুরূপ হয় তাকে মাইটোসিস কোষবিভাজন
বলে।
মাইটোসিসের বৈশিষ্ট্য:
১. মাইটোসিসের ফলে একটি নিউক্লিয়াস থেকে দুটি নিউক্লিায়াসের সৃষ্টি হয়।
২. এর ফলে নতুন সৃষ্ট কোষ দুটির ক্রোমোজোম সংখ্যা মাতৃকোষের সমান হয়।
৩. অপত্য কোষদুটি সর্বতোভাবে সমগুণ সম্পন্ন হয়।
৪. মাইটোসিস কোষ বিভাজনের ফলে সৃষ্ট কোষ বৃদ্ধি পেয়ে মাতৃকোষের সমান হয়।
৫. এ কোষ বিভাজনে প্রতিটি ক্রোমোজোম সেন্ট্রোমিয়ার সহ লম্বালম্বি ভাবে বিভক্ত হয়ে
দুটি অপত্য ক্রোমোজোম সৃষ্টি করে।
মাইটোসিসের গুরুত্ব:
১. এর ফলে নিউক্লিয়াস ও সাইটোপ্লাজমের মধ্যে ভারসাম্য বজায় থাকে।
২. এর ফলে বহুকোষী জীবের দৈহিক বৃদ্ধি ঘটে।
৩. অপত্য ও মাতৃ কোষের ক্রোমোজোম সংখ্যা ও গুণাগুণ একই থাকায় দেহের বৃদ্ধি সুশৃঙ্খলভাবে
হতে পারে।
৪. কোষের স্বাভাবিক আকার, আকৃতি ও আয়তন বজায় রাখতে
এ কোষ বিভাজন প্রয়োজন।
৫. ক্ষতস্থান পূরণ ও নতুন কোষ সৃষ্টির জন্য এ কোষ বিভাজন প্রয়োজন।
৬. অঙ্গজ জননে ও জনন কোষের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য এ কোষ বিভাজন প্রয়োজন।
৭. জীবের গুণগত স্থিশীলতা বজায় রাখতে এ কোষ বিভাজন প্রয়োজন।
উন্নত উদ্ভিদ ও প্রাণির দেহকোষ এ প্রক্রিয়ায় বিভাজিত হয়।
ইন্টারফেজ: বিভাজন শুরুর পূর্বে
কোষের যে প্রস্তুতিমূলক কাজ করতে হয় তাকে ইন্টারফেজ বলে।
মাইটোসিসের প্রধান ধাপ দুটি:
ক) ক্যারিওকাইনেসিস এবং
খ) সাইটোকাইনেসিস।
ক) ক্যারিওকাইনেসিস: মাইটোসিস কোষবিভাজনের নিউক্লিয়াসের বিভাজনকে ক্যারিওকাইনেসিস বলে।
ক্যারিওকাইনেসিস পাঁচটি ধাপে সম্পন্ন হয়।
যথা:-
ক. প্রোফেজ,
খ. প্রো-মেটাফেজ,
গ. মেটাফেজ,
ঘ. অ্যানাফেজ এবং
ঙ. টেলোফেজ।
ক. প্রোফেজ ধাপের বৈশিষ্ট্য: এটি মাইটোসিসের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী ধাপ। এ ধাপে-
১. কোষের সাইটোপ্লাজম ঘন ও নিউক্লিয়াস আকারে বড় হয়।
৩. প্রতিটি ক্রোমোসোম লম্বালম্বি দুভাগে বিভক্ত হয়ে দুটো করে ক্রোমাটিড গঠন করে।
৪. ক্রোমাটিড দুটি সেন্ট্রামিয়ার নামক বিন্দুতে যুক্ত থাকে।
৫. এ ধাপের অগ্রগতির সাথে সাথে ক্রোমোজোম গুলো স্প্রিং এর মত কুন্ডলীকৃত হয়ে ক্রমশ মোটা ও খাটো হতে থাকে। এই ধাপে ক্রোমোজোমগুলোকে
মাইক্রোস্কোপের মাধ্যমে দেখা যায়।
খ. প্রো-মেটাফেজ ধাপের বৈশিষ্ট্য: এটি দ্বিতীয় ও স্বপ্লস্থায়ী ধাপ।
১. নিউক্লিয়ার মেমব্রেন ও নিউক্লিওলাসের বিলুপ্তি ঘটতে থাকে।
২. প্রোটিন নির্মিত ও দুইমেরুবিশিষ্ট তন্তুযুক্ত একটি স্পিন্ডল যন্ত্র এর আবির্ভাব ঘটে।
৩. স্পিন্ডল যন্ত্রে দু ধরণের তন্তু দেখা যায়- সেন্ট্রোমিয়ারের সাথে যুক্ত ক্রোমোসোমাল
বা আকর্ষণ তন্তু আর দুই মেরু পর্যন্ত বিস্তৃত স্পিন্ডল তন্তু।
৪. প্রাণিকোষে দুই মেরুতে অবস্থিত সেন্ট্রিওল হতে অ্যাস্টার রশ্নি বিচ্ছুরিত হয়। একে অ্যাস্টার-রে বলে।
গ. মেটাফেজ ধাপের বৈশিষ্ট্য:
১. নিউক্লিয়ার মেমব্রেন ও নিউক্লিওলাসের সম্পূর্ণ বিলুপ্তি ঘটে।
২. স্পিন্ডল যন্ত্রের গঠন সম্পূর্ণ হয় এবং ক্রোমোসোমগুলো এর বিষুবীয় অঞ্চলে এসে
অবস্থান নেয়। এই সময় সেন্ট্রোমিয়ার বিষুবীয় অঞ্চলে এবং বাহু দুটি মেরুমুখি
হয়ে অবস্থান করে।
৩. এ ধাপেই ক্রোমোসোম গুলো সব থেকে মোটা ও খাটো হয়।
৪. প্রতিটি ক্রোমোসোমের ক্রোমাটিড দুটির আকর্ষণ কমে যায় এবং বিকর্ষণ শুরু হয়, তবে সেন্ট্রোমিয়ার তখনও অবিভক্ত থাকে।
৫. এ পর্যায়ের শেষদিকে সেন্ট্রোমিয়ারের বিভাজন শুরু হয়।
ঘ. অ্যানাফেজ ধাপের বৈশিষ্ট্য:
১. প্রতিটি ক্রোমোসোমের সেন্ট্রামিয়ার দুভাগে বিভক্ত হয়ে যায় ফলে ক্রোমাটিড দুটি
আলাদা হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় প্রতিটি ক্রোমাটিডকে অপত্য ক্রোমোসোম বলে এবং এতে একটি করে
সেন্ট্রোমিয়ার থাকে।
২. অপত্য ক্রোমোসোমগুলোর মধ্যে বিকর্ষণ শক্তি বৃদ্ধি পায় ফলে এরা বিষুবীয় অঞ্চল
থেকে পরস্পর বিপরীত মেরুর দিকে যেতে থাকে। অর্থাৎ ক্রোমোসোম গুলোর অর্ধেক এক মেরুর
দিকে বাকি অর্ধেক অন্য মেরুর দিকে অগ্রসর হতে থাকে।
৩. অপত্য ক্রোমোসোম গুলোর সেন্ট্রোমিয়ারের অবস্থানের ভিন্নতার কারণে এ সময় ক্রোমোসোম
গুলোকে ইংরেজি বর্ণমালার V, L, J, বা I এর মত দেখায়। তখন এদের নাম হয় যথাক্রমে মেটাসেন্ট্রিক,
সাবমেটাসেন্ট্রিক, অ্যাক্রোসেন্ট্রিক বা টেলোসেন্ট্রিক।
৪. ক্রোমোসোম গুলো কোষের দুই বিপরীত প্রান্তে পৌছায়।
৫. এধাপের শেষদিকে ক্রোমোসোমগুলো প্যাঁচ খুলে দৈর্ঘ্যে বৃদ্ধি পেতে থাকে।
ঙ. টেলোফেজ: এটি মাইটোসিসের শেষ পর্যায় এবং প্রোফেজের ঠিক বিপরীত।
১. অপত্য ক্রোমোসোমগুলো দুই বিপরীত মেরুতে এসে পৌছে।
২. ক্রোমোসোমের প্যাঁচ খুলে যেতে থাকায় তা আবার সরু ও লম্বা আকার ধারণ করে। অবশেষে জড়িয়ে গেলে নিউক্লিয়ার রেটিকুলাম গঠন করে।
৩. নিউক্লিওলাসের পুনঃআবির্ভাব ঘটে।
৪. নিউক্লিয়ার রেটিকুলাম কে ঘিরে নিউক্লিয়ার মেমব্রেনের আবির্ভাব ঘটে। ফলে দুই
মেরুতে দুটি অপত্য নিউক্লিয়াস গঠিত হয়।
৫. স্পিন্ডল যন্ত্রের কাঠামো ভেঙে যায় এবং তন্তুগুলো ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যায়।
খ) সাইটোকাইনেসিস: যে প্রক্রিয়ায় বিভাজনরত কোষের সাইটোপ্লাজম দুভাগে বিভক্ত হয় তাকে সাইটোকাইনেসিস বলে।
১. এধাপে বিষুবীয় এলাকায় এন্ডোপ্লাজমিক জালিকার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশগুলো জমা হয় এবং পরে এরা মিলিত হয়ে কোষ প্লেট গঠন করে।
২. সাইটোপ্লাজমিক অঙ্গাণুসমূহের সমবন্টন ঘটে।
৩. কোষ প্লেট পরে কোষ প্রাচীরে পরিণত হয়।
৪. প্রাণীর ক্ষেত্রে স্পিন্ডলযন্ত্রের বিষুবীয় অঞ্চল বরাবর কোষঝিল্লিটি ভাঁজ হয়ে
ভিতরের দিকে প্রবেশ করে এবং এই ভাঁজ গভীর হয়ে নিরক্ষীয় তলে বিপরীত প্রান্ত থেকে মিলিত
হয়।
৫. এভাবে একটি কোষ হতে সমআকৃতির সমগুণ সম্পন্ন দুটি কোষের সৃষ্টি হয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন