অষ্টম শ্রেণির বিজ্ঞান বইয়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় আলো। এই অধ্যায়ের সবথেকে না বোঝা অংশটি হলো ক্যামেরার গঠন। শিক্ষার্থীরা যেন তা বুঝতে পারে তাই একটি ভিডিও ক্লাসটি করা। নিচের বিবরণের দিকে বেশী ফোকাস না দিয়ে শিক্ষার্থদের প্রতি পরামর্শ থাকবে ক্লাসটি না টেনে ধৈর্য্য নিয়ে মন দিয়ে করা।
ক্যামেরার কার্যপ্রণালী
ভূমিকা:
ক্যামেরা হলো এক ধরনের অপটিক্যাল যন্ত্র, যা মানুষের চোখের মতো কাজ করে। বাইরের দৃশ্য
থেকে প্রতিফলিত আলোকরশ্মি সংগ্রহ করে ক্যামেরা ফিল্ম বা সেন্সরের উপর স্থায়ী ছবি তৈরি
করে। ক্যামেরার মধ্যে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ অংশ একসঙ্গে কাজ করে এই চিত্র ধারণ প্রক্রিয়া
সম্পন্ন করে।
ক্যামেরার প্রধান অংশসমূহ
১। ক্যামেরার বাক্স
(Camera Box):
এটি ক্যামেরার মূল কাঠামো, যা পুরো সিস্টেমকে ধরে রাখে এবং বাইরের অবাঞ্ছিত আলো প্রবেশ
থেকে রক্ষা করে। ক্যামেরার বাক্স সাধারণত সম্পূর্ণ কালো বা আলো প্রতিরোধী হয়।
২। লেন্স (Lens):
লেন্স হলো সেই অংশ, যা বাইরের দৃশ্য থেকে আসা আলোকরশ্মি সংগ্রহ করে এবং সেগুলোকে ফোকাস
করে ফিল্ম বা সেন্সরের উপর একটি উল্টানো বাস্তব চিত্র তৈরি করে।
৩। ডায়াফ্রাম
(Diaphragm):
ডায়াফ্রাম ক্যামেরার একটি ছোট ছিদ্রবিশিষ্ট অংশ, যার মাধ্যমে আলোর প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ
করা হয়। এটি বড় বা ছোট করা যায়, ফলে ছবির উজ্জ্বলতা ও গভীরতা ঠিক করা সম্ভব হয়।
৪। শাটার (Shutter):
শাটার হলো এমন একটি যন্ত্রাংশ, যা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য খুলে ফিল্মের উপর আলো প্রবেশের
সুযোগ দেয়। শাটারের খোলার ও বন্ধ হওয়ার সময়কে নিয়ন্ত্রণ করে ছবি ঠিকভাবে এক্সপোজ করা
হয়।
৫। ফিল্ম (Film):
ফিল্ম হলো একটি আলোকসংবেদী পাতলা স্তর, যেখানে আলো পড়ার ফলে রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে
এবং একটি লুকানো (latent) চিত্র তৈরি হয়। পরবর্তীতে ডেভেলপ করে এই চিত্র দৃশ্যমান করা
হয়।
৬। পর্দা (Screen):
পর্দা হলো এমন একটি অংশ, যেখানে লেন্সের মাধ্যমে আসা আলো পড়ে। মূলত পর্দায় বস্তুটির
চিত্র তৈরি হয়। এটি পরীক্ষামূলকভাবে চিত্রের সঠিক অবস্থান দেখার কাজে ব্যবহৃত হয়।
৭। স্লাইড (Slide):
স্লাইড হলো ক্যামেরার অভ্যন্তরের চলমান একটি অংশ, যার সাহায্যে ফিল্ম বা চিত্রের স্থান
পরিবর্তন করা যায়। একাধিক ছবি তুলতে বা পজিশন ঠিক করতে স্লাইড ব্যবহৃত হয়।
ক্যামেরায় চিত্র ধারণের
ধাপসমূহ
১। আলোকরশ্মির প্রবেশ:
বস্তু থেকে প্রতিফলিত আলোকরশ্মি ক্যামেরার লেন্সের মাধ্যমে ভেতরে প্রবেশ করে। লেন্স
এই আলোকরশ্মিকে ভেঙে পর্দার উপর বা ফিল্মের উপর ফোকাস করে একটি উল্টানো বাস্তব চিত্র
তৈরি করে।
২। ডায়াফ্রাম ও শাটারের
ভূমিকা:
ডায়াফ্রাম প্রয়োজনমতো আলোর পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে এবং শাটার নির্দিষ্ট সময়ের জন্য খুলে
গিয়ে ফিল্মে আলো প্রবেশ করায়।
৩। ফিল্মে চিত্র তৈরি:
শাটার খোলার সাথে সাথে আলো ফিল্মের উপর পড়ে এবং সেখানে রাসায়নিক পরিবর্তনের মাধ্যমে
একটি লুকানো চিত্র (latent image) তৈরি হয়।
৪। চিত্র প্রকাশ বা ডেভেলপমেন্ট:
এই লুকানো চিত্রকে বিশেষ রাসায়নিক দ্রব্যে (ডেভেলপিং দ্রবণ) ডুবিয়ে দৃশ্যমান চিত্র
তৈরি করা হয়। পরে স্টপ স্নান এবং ফিক্সার ব্যবহার করে ছবিকে স্থায়ী করা হয়।
৫। আধুনিক পরিবর্তন:
বর্তমানে ফিল্মের পরিবর্তে ডিজিটাল সেন্সর ব্যবহার করা হয়, যেখানে আলো ইলেকট্রিক সিগনালে
রূপান্তরিত হয়ে সরাসরি মেমোরি কার্ডে সংরক্ষিত হয়। ফলে ছবি সঙ্গে সঙ্গেই দেখা সম্ভব
হয়।
সংক্ষেপে অংশগুলির তালিকা:
- ক্যামেরার বাক্স
- লেন্স
- ডায়াফ্রাম
- শাটার
- ফিল্ম
- পর্দা
- স্লাইড
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন