সোমবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩

উদ্ভিদ টিস্যু (সরল টিস্যু)

 ২০২৩ সালের জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, বাংলাদেশ এর নবম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকরূপে নির্ধারিত জীববিজ্ঞান বইয়ের দ্বিতীয় অধ্যায়ের নাম জীবকোষ ও টিস্যু। উক্ত অধ্যায়ের আলোচ্য বিষয় সমূহকে তিনটি অংশে ভাগ করা যায় যথা ক. কোষীয় অঙ্গাণু অংশ খ. উদ্ভিদ টিস্যু অংশ এবং গ. প্রাণিটিস্যু অংশ। নিম্নে উদ্ভিদ টিস্যু অংশে আলোচনা করা সরল টিস্যু নিয়ে আলোচানা করা হলো।  আশাকরি নিম্নোক্ত বিষয় সমূহ পাঠ করে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে।

উদ্ভিদ টিস্যু

সংজ্ঞা: একই উৎস থেকে সৃষ্ট কতকগুলো কোষ আয়তন ও আকৃতিতে অভিন্ন অথবা ভিন্ন হওয়া সত্ত্বেও যখন সংঘবদ্ধভাবে একই ধরনের কাজ করে তখন ঐ কোষ সমষ্টিকে একত্রে উদ্ভিদ টিস্যু বলা হয় ।

উদ্ভিদটিস্যু প্রধানত ২ রকম। যথা: ১. ভাজক টিস্যু ও ২. স্থায়ী টিস্যু।

 ১. ভাজক টিস্যু: যে টিস্যুর কোষগুলো বিভাজনের মাধ্যমে নতুন কোষ সৃষ্টি করতে সক্ষম সে টিস্যুকে ভাজক টিস্যু বলে ।

 ২. স্থায়ী টিস্যু: যে টিস্যুর কোষগুলো বিভাজনে অক্ষম অর্থাৎ স্থায়ী আকার ধারণ করেছে এমন কোষ সমষ্টি দিয়ে গঠিত টিস্যুকে স্থায়ী টিস্যু বলা হয় । 

নিম্নে স্থায়ী টিস্যুর শ্রেণীবিন্যাস আলোচনা করা হলো-

স্থায়ী টিস্যুর শ্রেণিবিন্যাস
স্থায়ী টিস্যুর শ্রেণিবিন্যাস


 ১. সরল টিস্যু: যে স্থায়ী টিস্যুর কোষগুলোর উৎপত্তি এবং গঠন, আকৃতি ও কাজ একই রকম, তাকে সরল টিস্যু বলে।

কোষের আকৃতি ও প্রকৃতির ভিত্তিতে সরল টিস্যুকে নিম্নোক্ত তিন ভাগে ভাগ করা হয়:

যথা:    ক. প্যারেনকাইমা টিস্যু

খ. কোলেনকাইমা টিস্যু এবং

গ. স্ক্লেরেনকাইমা টিস্যু

 ক. প্যারেনকাইমা টিস্যু : যে সব স্থায়ী টিস্যু সেলুলোজ নির্মিত পাতলা কোষপ্রাচীরযুক্ত সজীব কোষ সমন্বয়ে গঠিত তাকে প্যারেনকাইমা টিস্যু বলে ।

 গঠন:

১. কোষগুলো সমব্যাসীয় অর্থাৎ দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও গভীরতা প্রায় একই ।
২. কোষগুলো দেখতে গোলাকার, ডিম্বাকার, আয়তাকার বা বহুভূজাকার ।
৩. কোষপ্রাচীর পাতলা ও দৃঢ় সেলুলোজ নির্মিত ।
৪. কোষগুলোর মধ্যে আন্তঃকোষীয় ফাঁক থাকে।
৫. কোষগুলোতে পর্যাপ্ত প্রোটোপ্লাজম থাকে।

 বিশেষ অবস্থা :

১. এসব কোষে যখন ক্লোরোপ্লাস্ট থাকে তখন তাদের ক্লোরেনকাইমা বলে ।

২. জলজ উদ্ভিদের বড় বড় বায়ুকুঠুরীযুক্ত প্যারেনকাইমাকে অ্যারেনকাইমা বলে ।

 অবস্থান:

মূল ও কান্ডের ত্বক, মজ্জা, পরিচক্র, পাতার মেসোফিল, ফলের মাংসল অংশ, বীজের ভ্রূণ, সস্য প্রভৃতি অংশে প্যারেনকাইমা টিস্যু রয়েছে।

 কাজ:

১. ক্লোরেনকাইমা টিস্যু সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় খাদ্য প্রস্তুত করে ।

২. বিভিন্ন অংশে খাদ্য সঞ্চয় (ফল, মূল, বীজ) করে।

৩. জাইলেম ও ফ্লোয়েম প্যারেনকাইমা পানি ও উৎপাদিত খাদ্য পরিবহন করে।

৪. দেহের ক্ষত নিরাময় ও পুনরুৎপাদনে সাহায্য করে।

 খ. কোলেনকাইমা টিস্যু: যে সরল স্থায়ী টিস্যু অসমস্থূল কোষপ্রাচীরযুক্ত সজীব কোষে গঠিত, তাকে কোলেনকাইমা টিস্যু বলে।

গঠন:



১. কোষগুলো কিছুটা লম্বাকৃতির এবং সজীব।

২. কোষে প্রোটোপ্লাজম থাকে ।

৩. কোষপ্রাচীরে সেলুলোজ এবং পেকটিন জমা হয়ে অধিক পুরু হয়।

৪. কোষপ্রাচীর অসমভাবে পুরু এবং কোণাগুলো অধিক পুরু । এজন্য কোষগুলোকে প্রস্থচ্ছেদে ষড়ভূজাকার দেখায়।

৫. এ টিস্যুর কোষে আন্তঃকোষীয় ফাঁক থাকতে পারে ।

৬. কোষের প্রান্তগুলো চৌকোনাকার, সরু বা তির্যক হতে পারে ।

৭. এরা উদ্ভিদ দেহকে দৃঢ়তা প্রদানও করে থাকে ।

 অবস্থান:

পাতার শিরা এবং পত্র বৃন্তে এ টিস্যু দেখতে পাওয়া যায়। কচি ও নমনীয় কাণ্ড যেমন কুমড়া ও দণ্ডকলসের কাণ্ডে এ টিস্যু দেখতে পাওয়া যায়।

কাজ:

১. কোষে ক্লোরোপ্লাস্ট থাকায় খাদ্য উৎপাদনে সহায়তা করে ।

২. উদ্ভিদদেহে যান্ত্রিক দৃঢ়তা প্রদান করে ।

৩. এটি প্রসারণক্ষম ও স্থিতিস্থাপক হওয়ায় উদ্ভিদদেহ বাঁকতে সক্ষম হয়।

 গ. স্ক্লেরেনকাইমা টিস্যু: যান্ত্রিক কার্যের জন্য নির্দিষ্ট লিগনিনযুক্ত প্রাচীর বিশিষ্ট এবং প্রোটোপ্লাজমহীন কোষসমষ্টি নিয়ে গঠিত টিস্যুকে স্ক্লেরেনকাইমা টিস্যু বলে।

গঠন :



১. এ টিস্যুর কোষগুলো শক্ত, অনেক লম্বা এবং পুরু প্রাচীরবিশিষ্ট হয়।

২. কোষের প্রান্তগুলো সরু ও সূঁচালো প্রান্তবিশিষ্ট হয়।

৩. লিগনিন জমা হওয়ায় কোষপ্রাচীর মোটা ও স্থিতিস্থাপক হয় ।

৪. প্রাথমিক অবস্থায় কোষে প্রোটোপ্লাজম উপস্থিত থাকলেও খুব তাড়াতাড়ি তা নষ্ট হয়ে মৃত কোষে পরিণত হয়।

 স্ক্লেরেনকাইমা টিস্যুকে প্রধাণত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:- ১. ফাইবার ও ২. স্ক্লেরাইড।

 

১. ফাইবার:

ফাইবারের কোষগুলো অত্যধিক লম্বা, সরু ও প্রান্তদ্বয় সূচালো। এদের প্রাচীর অত্যধিক পুরু ও শক্ত এবং লুমেন অতি সংকুচিত। এরা পিটেড বা কৃপাঙ্কিত হয়। জাইলেম ফাইবারকে উড ফাইবার এবং ফ্লোয়েম ফাইবারকে বাস্ট ফাইবার বলা হয় ।

 কাজ:

১. দৃঢ়তা প্রদান করে ।

২. যান্ত্রিক শক্তি প্রদান করে ।

 ২. স্ক্লেরাইড:

এরা গুচ্ছে উৎপন্ন হয়। এরা খাটো, সমব্যাসীয়, কখনো লম্বাটে আবার কখনো তারকাকার হতে পারে। এদের গৌণপ্রাচীর খুবই শক্ত, অত্যন্ত পুরু এবং লিগনিনযুক্ত। এদের কোষপ্রাচীর সাধারণত কূপযুক্ত হয়। এদেরকে স্টোনসেলও বলা হয়।

 অবস্থান: নগ্নবীজী ও দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদের কর্টেক্স, ফল ও বীজত্বকে স্ক্লেরাইড টিস্যু দেখা যায়। বাহিঃত্বক জাইলেম এবং ফ্লোয়েমের সাথে একত্রে পত্রবৃত্তে কোষগুচ্ছরূপে থাকতে পারে ।

 কাজ:

১. উদ্ভিাদের বিভিন্ন অঙ্গকে দৃঢ়তা প্রদান করে ।

২. মৃত অবস্থায় অনেক সময় গাছের বর্জ্য পদার্থ ধারণ করে।

৩. ফল ও বীজের ত্বকে অবস্থান করে ভেতরের নরম অংশকে রক্ষা করে ।

জটিল টিস্যু সম্পর্কে জানতে এই লিংকে চাপ দিন।
প্রিয় শিক্ষার্থীরা, আশাকরি উপরের নোট থেকে তোমরা উপকৃত হবে। তোমাদের কারো কোনো সমস্যা থাকলে বা মনে কোনো প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই আমাকে জানাতে ভুলবেনা। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পেঁয়াজ কাটলে চোখ দিয়ে পানি বের হয় কেন?

  যদি আপনার কখনো জানতে ইচ্ছে করে- পেঁয়াজ কাটলে চোখ দিয়ে পানি বের হয় কেন? তবে এই লেখাটি আপনার জন্য। ঠিক আছে, আসুন একটু বিস্তারিতভাবে দেখি। ...