২০২৩ সালের জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, বাংলাদেশ এর নবম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকরূপে নির্ধারিত জীববিজ্ঞান বইয়ের দ্বিতীয় অধ্যায়ের নাম জীবকোষ ও টিস্যু। উক্ত অধ্যায়ের আলোচ্য বিষয় সমূহকে তিনটি অংশে ভাগ করা যায় যথা ক. কোষীয় অঙ্গাণু অংশ খ. উদ্ভিদ টিস্যু অংশ এবং গ. প্রাণিটিস্যু অংশ। নিম্নে উদ্ভিদ টিস্যু অংশে আলোচনা করা জটিল টিস্যু (ফ্লোয়েম) নিয়ে আলোচানা করা হলো। আশাকরি নিম্নোক্ত বিষয় সমূহ পাঠ করে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে।
ফ্লোয়েম টিস্যু:
কাজ ও জন্মসূত্রে অভিন্ন কিন্তু আকৃতি
ও প্রকৃতিতে ভিন্ন যে টিস্যু সমষ্টি উৎপাদিত খাদ্য সামগ্রীকে উদ্ভিদ দেহের বিভিন্ন
অঞ্চলে সংবহনের দায়িত্ব পালন করে সে টিস্যু সমষ্টিকে একত্রিতভাবে ফ্লোয়েম বলে।
ফ্লোয়েম টিস্যু ৪ প্রকার কোষ নিয়ে গঠিত। যথা- ক. সিভকোষ খ. সঙ্গীকোষ গ. ফ্লোয়েম প্যারেনকাইমা এবং ঘ. ফ্লোয়েম ফাইবার।
ক. সিভকোষ: ফ্লোয়েম টিশুতে অবস্থিত চালনি সদৃশ প্রস্থপ্রাচীর যুক্ত নলাকার কোষকে সিভনল বা সিভকোষ বলে।
১. এ কোষগুলো লম্বা ও ভেতরটা ফাঁপা
।
২. একটা কোষের মাথায় আরেকটি কোষ
বসে একটা লম্বা নলের সৃষ্টি করে ।
৩. মাথায় মাথায় অবস্থিত দুটি কোষের
মধ্যপ্রাচীর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিদ্র যুক্ত। ছিদ্রযুক্ত এ প্রস্থপ্রাচীরকে সিভপ্লেট বলে।
পরপর অবস্থিত দুটি সিভকোষের প্রোটোপ্লাজম সিভপ্লেটের ছিদ্র দিয়ে পরস্পর যোগাযোগ রক্ষা
করে ।
৪. পরিণত সিভকোষে কোনো নিউক্লিয়াস
থাকেনা, তবে সাইটোপ্লাজম থাকে যা প্রাচীর ঘেষে অবস্থান করে। ফলে একটি কেন্দ্রীয় ফাঁপা
জায়গার সৃষ্টি হয় যা খাদ্য পরিবহনের নল হিসেবে কাজ করে ।
৫. এদের কোষপ্রাচীর লিগনিন যুক্ত।
অবস্থান: সকল ধরনের গুপ্তবীজী উদ্ভিদের ফ্লোয়েমে সিভনল থাকে ।
কাজ:
১. সবুজ অংশে (প্রধাণত পাতায়) প্রস্তুতকৃত
খাদ্য উদ্ভিদের বিভিন্ন সজীব অংশে পরিবহন করাই এর প্রধান কাজ ।
২. এরা খাদ্য সঞ্চয়েও অংশ নিয়ে থাকে ।
খ. সঙ্গীকোষ: সিভকোষের সাথে সঙ্গী হিসেবে বিদ্যমান বৃহৎ নিউক্লিয়াস ও ঘন সাইটোপ্লাজম যুক্ত প্যারেনকাইমা কোষকে সঙ্গীকোষ বলে ।
সঙ্গীকোষ প্যারেনকাইমা জাতীয় কোষ এবং সিভকোষের সাথেই অবস্থান করে তাই এর এরূপ নামকরণ করা হয়েছে।
গঠন বৈশিষ্ট্য:
১. এটি প্যারেনকাইমা জাতীয় কোষ ।
২. এর নিউক্লিয়াস অনেক বড় থাকে
।
৩. এর সাইটোপ্লাজম অনেক ঘন থাকে ।
৪. এর কোষ গহ্বর ক্ষুদ্র হয়ে থাকে
।
৫. এটি পাতলা প্রাচীর যুক্ত হয়।
অবস্থান:
সকল ধরনের গুপ্তবীজী উদ্ভিদের ফ্লোয়েমে
সঙ্গীকোষ থাকে । ফার্ন ও ব্যক্তবীজী উদ্ভিদে এদের উপস্থিতি নেই ।
কাজ:
১. খাদ্য চলাচলে সিভনলকে সাহায্য
করাই সঙ্গীকোষের প্রধান কাজ ।
২. এরা খাদ্য সঞ্চয়েরও কাজ করে।
গ. ফ্লোয়েম প্যারেনকাইমা: ফ্লোয়েমে অবস্থিত প্যারেনকাইমা জাতীয় কোষ তবে সঙ্গীকোষ হতে কিছুটা ভিন্ন ধরনের কোষকে ফ্লোয়েম প্যারেনকাইমা বলে ।
এদের কোষ সাধারণ প্যারেনকাইমার মতো পাতলা কোষপ্রাচীরযুক্ত এবং প্রোটোপ্লাজম যুক্ত ।
অবস্থান:
ফার্ন জাতীয় উদ্ভিদ, নগ্নবীজী উদ্ভিদ এবং দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদের ফ্লোয়েম টিস্যুতে ফ্লোয়েম প্যারেনকাইমা থাকে। একবীজপত্রী উদ্ভিদে ফ্লোয়েম প্যারেনকাইমা থাকেনা ।
কাজ :
১. এরা খাদ্য পরিবহনে সহয়তা করে
।
২. এরা খাদ্য সঞ্চয়েও ভূমিকা পালন করে থাকে ।
ঘ. ফ্লোয়েম ফাইবার : ফ্লোয়েম টিস্যুতে অবস্থিত স্ক্লেরেন কাইমা জাতীয় কোষকে ফ্লোয়েম ফাইবার বলা হয়।
এগুলো এক ধরনের দীর্ঘ কোষ যাদের প্রান্তদেশ
পরস্পরের সাথে যুক্ত থাকে। এসব কোষের প্রাচীরে কূপ দেখা যায়। এদেরকে বাস্ট ফাইবারও
বলা হয়ে থাকে। পাটের আঁশ এক ধরনের বাস্ট ফাইবার। উদ্ভিদ অঙ্গের গৌণ বৃদ্ধির সময় এ
ফাইবার উৎপন্ন হয়।
কাজ:
১. ফ্লোয়েমকে দৃঢ়তা প্রদান করাই
এ টিস্যুর প্রধান কাজ।
২. পরোক্ষভাবে খাদ্যপরিবহনেও এ টিস্যু
ভূমিকা পালন করে ।
ফ্লোয়েম টিস্যুর কাজ: ফ্লোয়েম টিস্যু নিম্নবর্ণিত কাজ গুলো সম্পন্ন করে থাকে ।
১. সিভকোষ প্রস্তুতকৃত খাদ্যদ্রব্য
সবুজ অংশ হতে দেহের বিভিন্ন সজীব অংশে পরিবহন করে ।
২. ফ্লোয়েম ফাইবার ফ্লোয়েম টিশ্যুকে
তথা উদ্ভিদাঙ্গকে দৃঢ়তা প্রদাক করে ।
৩. ফ্লোয়েম প্যারেনকাইমা প্রয়োজনে
খাদ্য সঞ্চয় করে এবং পরিবহনে সাহায্য করে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন