রবিবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩

পরমাণুর গঠন অধ্যায়ের ক্লাস লেকচার

২০২৩ সালের জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, বাংলাদেশ এর অষ্টম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকরূপে নির্ধারিত বিজ্ঞান বইয়ের ষষ্ঠ অধ্যায়ের নাম পরমাণুর গঠন। এই অধ্যায়ে আলোচিত বিষয়বস্তুর আলোকে গুরুত্বপূর্ণ পরমাণু মতবাদ, পরমাণু মডেল ও সংজ্ঞা সমূহ নিম্নে দেওয়া হল। আশাকরি নিম্নোক্ত বিষয় সমূহ পাঠ করে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে।

ষষ্ঠ অধ্যায় ( পরমাণুর গঠন)

পরমাণু: পরমাণু হল মৌলিক পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণা, যাকে আরও বিশ্লেষণ করলে ঐ পদার্থের স্বাধীন অস্তিত্ব বিনষ্ট হয়ে যায়।

  • পরমাণুর স্বাধীন অস্তিত্ব নেই। অর্থাৎ পরমাণু একা একা থাকতে পারেনা (নিষ্ক্রিয় গ্যাসের অণু ব্যাতিত) ।
  • পরমাণু সর্বদা অণু গঠন করে থাকে।

পরমাণু
পরমাণু
অণু: মৌলিক বা যৌগিক পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণা যা সংশ্লিষ্ট পদার্থের বৈশিষ্ট্য বজায় রেখে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশ গ্রহণ করতে পারে এবং যাকে আরও ভাগ করলে ঐ পদার্থের স্বাতন্ত্র লোপ পায় তাকে অণু বলে।

  • সকল পদার্থই অণু আকারে থাকে।
  • অণু রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করেনা।
  • বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণের আগে তা পরমাণুতে পরিণত হয়।
  • মৌলের একক পরমাণু এবং যৌগের একক অণু ।
  • প্রত্যেক মৌল তার নিজস্ব পরমাণু দ্বারা গঠিত।
  • হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, ক্লোরিণ এদের প্রত্যেকের অণু দুটি পরমাণু দ্বারা গঠিত ।
  • নিষ্ক্রিয় গ্যাস হিলিয়াম, নিয়ন, আর্গনের অণু একটি মাত্র পরমাণু দ্বারা গঠিত।

ডাল্টনের পরমাণু মতবাদ: ১৮০৩ সালে ইংরেজ পদার্থ ও রসায়ন বিজ্ঞানী জন ডাল্টন পরমাণু সম্পর্কে একটি তত্ত্ব প্রকাশ করেন যা ডাল্টনের পরমাণুবাদ নামে পরিচিত । তাঁর প্রদত্ত পরমাণুবাদের স্বীকার্য গুলি হলো 

বিজ্ঞানী জন ডাল্টন
বিজ্ঞানী জন ডাল্টন
১. সকল পদার্থ অতি ক্ষুদ্র কণাসমূহ দ্বারা গঠিত, এই কণাগুলোর নাম পরমাণু ।
২. একই পদার্থের পরমাণুসমূহের আকার, ভর এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্য একই রকম হয়, ভিন্ন ভিন্ন পদার্থের পরমাণু সমূহের আকার, ভর এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্য ভিন্ন রকমের হয় ।
৩. পরমাণু সমূহ বিভাজিত, সৃষ্টি বা ধ্বংস হতে পারে না।
8. সরল পূর্ণসংখ্যক অনুপাতে বিভিন্ন পদর্থের পরমাণু সংযুক্ত হয়ে রাসায়নিক যৌগের সৃষ্টি করে ।
৫. রাসায়নিক বিক্রয়াসমূহে পরমাণু সংযোজিত, বিভক্ত বা পুনর্বিন্যাসিত হয়।

যদিও ডাল্টনের পরমাণুবাদ আধুনিক রসায়নের ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত করে, তথাপি এ মতবাদের কিছু ত্রুটি আছে। এগুলো হল-

১. ডাল্টনের পরমাণু মতবাদে মৌলিক ও যৌগিক উভয় পদার্থের ক্ষুদ্রতম অংশের নাম পরমাণু বলা হয় । কিন্তু এদের মধ্যে বিশেষ কোন পার্থক্য দেখানো হয়নি ।

২. এ মতবাদ অনুসারে একই মৌলের সকল পরমাণুর ভর একই ৷ কিন্তু আধুনিক রসায়নের মতে একই মৌলের বিভিন্ন ভরের পরমাণু আছে, যাদেরকে পরস্পরের আইসোটোপ বলা হয়।

৩. ডাল্টনের মতবাদ অনুসারে পরমাণু সমূহ অবিভাজ্য । কিন্তু আধুনিক রসায়নের কল্যাণে আমরা জানি যে, পরমানুকে ভাঙলে ইলেক্ট্রন, প্রোটন ও নিউট্রন নামক স্থায়ী মৌলিক কণিকা পাওয়া যায় ।

রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেল: স্বর্ণ পাতের উপর আলফা কণার বিক্ষেপণ পরীক্ষার ফলাফলের উপর ভিত্তি করে ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী আর্নেস্ট  রাদারফোর্ড সৌরমন্ডলের সাথে সাদৃশ্য রেখে পরমাণুর গঠন সম্পর্কে নিজস্ব মতবাদ উপস্থাপন করেন। এ মতবাদটিকে রাদারফোর্ডের সোলার সিস্টেম এটম মডেল বলা হয়ে থাকে ।

বিজ্ঞানী আর্নেস্ট রাদারফোর্ড
বিজ্ঞানী আর্নেস্ট রাদারফোর্ড

এ মডেলের উল্লেখযোগ্য প্রস্তাবগুলো হলোঃ-

১. সকল পরমাণু অতিশয় ক্ষুদ্র গোলাকৃতি কণা। এর দুটি অংশ রয়েছে
যথা: (ক) কেন্দ্র বা নিউক্লিয়াস এবং (খ) কেন্দ্ৰ বহির্ভূত অঞ্চল ।
২. পরমাণুর কেন্দ্রস্থলে একটি ধনাত্মক চার্জবিশিষ্ট ভারী বস্তু বিদ্যমান। এই ভারী বস্তুকে পরমাণুর কেন্দ্র বা নিউক্লিয়াস বলে। পরমাণুর মোট আয়তনের তুলনায় নিউক্লিয়াসের আয়তন অতি নগণ্য ।
৩. পরমাণুর প্রায় সবটুকু ভর এর নিউক্লিয়াসে পুঞ্জীভূত। তাই মোটামুটিভাবে নিউক্লিয়াসের ভরই পারমাণবিক ভর।
৪. সৌরমন্ডলে সূর্যের চারদিকে আবর্তনীয় গ্রহসমূহের মত পরমাণুতে নিউক্লিয়াসের চতুর্দিকে কক্ষপথে কতগুলো ঋণাত্মক কণিকা সর্বদা ঘূর্ণায়মান থাকে। এদের ইলেকট্রন বলে ।
৫. পরমাণু বিদ্যুৎ নিরপেক্ষ। তাই পরমাণুতে ধনাত্মক চার্জের সংখ্যা এবং পরিক্রমণশীল ঋণাত্মক চার্জযুক্ত ইলেকট্রনের সমান।
৬. নিউক্লিয়াস ও ইলেকট্রনের মধ্যে বিরাজিত কেন্দ্রমুখী স্থির বিদ্যুৎ আকর্ষণ বল ও ঘূর্ণনের ফলে সৃষ্ট কেন্দ্রবিমুখী বলের মান সমান ও বিপরীতমুখী।

চিত্র: স্বর্ণপাতের উপর আলফা কণার বিক্ষেপণ পরীক্ষা
যদিও রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেল সর্বপ্রথম গ্রহনযোগ্যভাবে পরমাণুর গঠন ব্যাখ্যা করে, তথাপি এ মডেলের কিছু উল্লেখযোগ্য ত্রুটি রয়েছে।এর মধ্যে প্রধান ত্রুটি তিনি ইলেকট্রনের ঘূর্ণনের কোনো সুনির্দিষ্ট কক্ষপথের কথা বলেন নি।

রাদারফোর্ডের পরমাণুমডেলের ত্রুটি ঠিক করে বিজ্ঞানী নিলস্ বোর নতুন একটি পরমাণু মডেল প্রস্তাব করেন। তাতে তিনি পরমাণুর নিউক্লিয়াসের চতুর্দিকে ঘূর্ণায়মান ইলেকট্রনের জন্য কিছু সুনির্দিষ্ট কক্ষপথের প্রস্তাব করেন।

গুরুত্বপূর্ণ সংজ্ঞা সমূহ-

পারমাণবিক সংখ্যা: কোনো মৌলের একটি পরমাণুর নিউক্লিয়াসে অবস্থিত প্রোটনের সংখ্যাকে তার পারমাণবিক সংখ্যা বলে।

 ভরসংখ্যা: কোনো মৌলের একটি পরমাণুর নিউক্লিয়াসে অবস্থিত প্রোটন ও নিউট্রনের মোট সংখ্যাকে তার ভরসংখ্যা বলে।

আইসোটোপ: একই পারমাণবিক সংখ্যা কিন্তু ভিন্ন ভরসংখ্যা বিশিষ্ট পরমাণু সমূহকে পরস্পরের আইসোটোপ বলে।

ইলেকট্রন বিন্যাস: কোনো পরমাণুর নিউক্লিয়াসের চতুর্দিকে বিভিন্ন শক্তিস্তরে ইলেকট্রনের সজ্জারীতিকে ইলেকট্রন বিন্যাস বলে ।

পরমাণুর স্থিতিশীল হওয়ার শর্ত: প্রত্যেক পরমাণু তার সর্বশেষ শক্তিস্তরে দুটি বা আটটা ইলেকট্রন অর্জন করতে চায়।সর্বশেষ শক্তিস্তর প্রথম স্তর হলে দুটি আর অন্য যেকোনো স্তর হলে আটটি ইলেকট্রন অর্জন করতে চায় ।

 আয়ন: ধনাত্মক বা ঋণাত্মক আধান যুক্ত পরমাণুকে আয়ন বলে ।

 ক্যাটায়ন: যে পরমাণু ইলেকট্রন ত্যাগ করে ধনাত্মক আয়নে পরিণত হয় তাকে ক্যাটায়ন বলে।

 অ্যানায়ন: যে পরমাণু ইলেকট্রন শোষণ করে ঋণাত্মক আয়নে পরিণত হয় তাকে অ্যানায়ন বলে।

প্রিয় শিক্ষার্থীরা, আশাকরি উপরের নোট থেকে তোমরা উপকৃত হবে। তোমাদের কারো কোনো সমস্যা থাকলে বা মনে কোনো প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই আমাকে জানাতে ভুলবেনা। 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবম শ্রেণি: বিজ্ঞান বই: নবম অধ্যায়: জৈব অণু অধ্যায়ের নোট (পর্ব:০১)

জৈব অণু অধ্যায়ের মূলকথা সজীব কোষ অসংখ্য অণু দিয়ে গঠিত। এই অণুগুলোর মধ্যে রয়েছে ক্ষুদ্র অণু এবং বৃহৎ অণু যেগুলো একত্রে জৈব অণু বলে পরিচিত। ...